কখনো কি এমন কিছু কল্পনা করেছেন, যা শব্দের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটে যেতে পারে? চোখের পলকে এক শহর থেকে আরেক শহরে চলে যেতে পারে?
এই অদ্ভুত ও ভয়ংকর জিনিসটাই হলো হাইপারসনিক মিসাইল(Hypersonic Missile)।

এটি এখন যুদ্ধের জগতে এক বড় বিপ্লব ঘটিয়েছে। এত দ্রুত ছুটে আসে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বুঝে উঠার আগেই এটি আঘাত হানে।

🧠 হাইপারসনিক মানে কী?
“হাইপারসনিক” মানে হলো শব্দের গতির পাঁচ গুণ বা তার বেশি।
শব্দের গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১,২৩৫ কিমি। আর হাইপারসনিক মিসাইল(Hypersonic Missile) ঘণ্টায় ৬,১৭৪ কিমি বা তার বেশি গতিতে চলতে পারে!

আপনি ধরতে পারেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে গাড়িতে ৬ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু এই মিসাইল সেটা মাত্র ২ মিনিটেরও কম সময়ে পার করতে পারে! এতটাই দ্রুত।

*হাইপারসনিক মিসাইল(Hypersonic Missile) কীভাবে বানানো হয়?
একটি হাইপারসনিক মিসাইলে থাকে ৪টি প্রধান অংশ:

১. ওয়ারহেড (মাথা অংশ):
এখানে বিস্ফোরক বা পারমাণবিক বস্তু থাকে। এটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে বিস্ফোরণ ঘটায়।

২. ইঞ্জিন বা চালনা ব্যবস্থা:
দুই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়:

Scramjet: বাতাসের অক্সিজেন ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে মিসাইল চালায়।

Boost-glide system: রকেট দিয়ে উপরে উঠিয়ে, তারপর গ্লাইড করে লক্ষ্যবস্তুতে নামে।

৩. নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (গাইডেন্স সিস্টেম):
জিপিএস, সেন্সর, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে এটি নিজে পথ খুঁজে নেয়।

৪. বিশেষ ম্যাটেরিয়াল (বডি):
মিসাইল এত গতিতে চলে যে তাপমাত্রা ২০০০°C পর্যন্ত পৌঁছায়। তাই এটি তৈরি হয় এমন ধাতু ও কম্পোজিট দিয়ে, যেগুলো এই তাপ সহ্য করতে পারে।

🎯 কীভাবে কাজ করে?
হাইপারসনিক মিসাইলের দুই ধরণের কাজের পদ্ধতি রয়েছে:

১. Hypersonic Glide Vehicle (HGV):
প্রথমে একটি রকেটের মাধ্যমে অনেক উঁচুতে পাঠানো হয়।
তারপর সেটি গ্লাইড করে নিচে নেমে আসে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
এই মিসাইল মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতে পারে, তাই এটিকে ধরতে খুব কঠিন।

২. Hypersonic Cruise Missile (HCM):
এই মিসাইল নিজেই scramjet ইঞ্জিন দিয়ে চালিত হয়।
এটি অনেক নিচু দিয়ে উড়ে যায় এবং বাতাসের অক্সিজেন ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যায়।

🛡 কেন এত ভয়ংকর?
এই মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা রাডারকে খুব সহজে ফাঁকি দিতে পারে। কারণ:

১. অত্যন্ত দ্রুত গতি:
এটি এত দ্রুত চলে যে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু করার আগেই আঘাত হানতে পারে।

২. দিক পরিবর্তন করার ক্ষমতা:
মাঝপথে হঠাৎ করে বাঁক নিতে পারে, তাই একে থামানো প্রায় অসম্ভব।

৩. নিচু দিয়ে উড়া:
এটি মাটি থেকে অনেক নিচু দিয়ে চলে, তাই রাডারে ধরা পড়ে না।

৪. জ্যামিং প্রযুক্তি:
এটি রাডার বা জিপিএস সিগন্যালকে বিভ্রান্ত করতে পারে, যেন একে খুঁজে না পাওয়া যায়।

৫. তাপ প্রতিরোধক আবরণ:
মিসাইল গরম হলেও, বিশেষ কোটিং এর কারণে রাডার বা থার্মাল সেন্সর বুঝতেই পারে না।

🔍 বর্তমান বিশ্বের চিন্তা
হাইপারসনিক মিসাইল এখনো অনেক দেশের জন্য বিরাট মাথাব্যথা। কারণ এটি এখনো পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।

বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো যেমন:

যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়া

চীন

ইরান

এরা সবাই এই প্রযুক্তি তৈরি করছে এবং নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত করছে।

🧠 ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন হাইপারসনিক মিসাইল ঠেকানোর নতুন প্রযুক্তি তৈরি করতে। এর মধ্যে রয়েছে:

AI-নির্ভর ডিফেন্স সিস্টেম

লেজার অস্ত্র (Directed Energy Weapon)

Hypersonic Interceptor মিসাইল

তবে এসব প্রযুক্তি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, সেটা সময়ই বলবে।

🧨 এটা কি ভালো না খারাপ?
হাইপারসনিক মিসাইল খুবই ভয়ংকর। এটি যুদ্ধকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
কিন্তু একে ভালো বা খারাপ বলার আগে ভাবতে হবে—এটি কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।যদি দেশকে রক্ষা করার জন্য হয়, তবে এটা একরকম জরুরি।কিন্তু যদি এটি আক্রমণের জন্য হয়, তাহলে এটা মানুষের জীবনের জন্য হুমকি।

হাইপারসনিক অস্ত্র যুদ্ধের ধরন বদলে দিয়েছে কারণ এগুলো শব্দের গতির ৫ গুণেরও বেশি দ্রুত, ফলে প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় থাকে না। এগুলো মাঝপথে দিক বদলাতে পারে, তাই মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বিভ্রান্ত হয়। কয়েক মিনিটেই দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়, যা আগে ঘণ্টা লাগত। পারমাণবিক বা অ-পারমাণবিক উভয় ধরনের আক্রমণ সম্ভব, ফলে অনিশ্চয়তা ও ভয় বেড়ে যায়। এতে সামরিক কৌশল বদলে গিয়ে দ্রুত, গোপন ও অপ্রস্তুত আঘাতের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে।প্রযুক্তির আশির্বাদে এটা যেন অভিশাপ না হয় সেটা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version