আজকের দিনে স্মার্টফোন(Smartphone) যেন আমাদের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কল করা কিংবা বার্তা পাঠানোর সীমা ছাড়িয়ে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে দৈনন্দিন নানা কাজে-বিনোদন, অনলাইন কেনাকাটা, সামাজিক যোগাযোগ, পড়াশোনা, এমনকি ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও। যার কারনে স্মার্টফোন(Smartphone) ছাড়া দৈনন্দিন জীবন ভাবাই যায় না। কিন্তু প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে ফোনে জমা হতে থাকে অগণিত ফাইল, অ্যাপ ও ডেটা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফোন ধীরগতির হয়ে পড়ে। আর তখন অনেকেই পুরোনো ফোন বদলে নতুন ফোন কেনার কথা ভাবেন।
তবে যদি আপনি একটু সচেতন হোন তাহলে আপনার প্রিয় ফোনটিকে আগের মতোই গতিশীল এবং সুপার ফাস্ট রাখা সম্ভব। নিচে এমন কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনার ফোনের গতি অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে যাবে।
১. ব্যাকগ্রাউন্ডের চলমান অ্যাপ নিয়ন্ত্রণে আনুন:
এমন অনেক অ্যাপ আছে, যেগুলো আপনি সরাসরি ব্যবহার না করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকে। তারা বিভিন্ন ধরনের নোটিফিকেশন পাঠায়, লোকেশন ট্র্যাক করে বা ডেটা আপডেট করে। ফলস্রুতিতে এসব অ্যাপ ফোনের প্রসেসর এবং RAM-এর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে আর একারনেই ফোন স্লো হয়ে যায় এবং ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
এবার তাহলে সমাধান নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ফোনের সেটিংসে গিয়ে “Background apps” বা “App management” অপশনে দেখুন কোন অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছে। যেগুলো প্রয়োজন নেই সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বন্ধ করে দিন। এতে করে ফোনের কার্যক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে এবং সেটা হাতেনাতেই টের পাবেন।
২. ক্যাশে (cache)মেমোরি পরিষ্কার করুন
আমরা যখন অ্যাপ ব্যবহার করি, তখন সেগুলো বিভিন্ন ফাইল সাময়িকভাবে ফোনে জমা রাখে, যাকে বলে ক্যাশে (Cache)। শুরুতে এটি কাজে লাগলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশে মেমোরি ফোনে জায়গা দখল করে রাখে এবং ফোনকে স্লো করে দেয়।
সমাধান:
প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও ফোনের ক্যাশে মুছে ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
Android ফোনে: Settings > Storage > Cached data থেকে ক্লিয়ার করা যায়।
কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপের ক্যাশে মুছতে: Settings > Apps > [App name] > Storage > Clear Cache
এভাবে নিয়মিত ক্যাশে ফাইল মুছে ফেলতে পারলে ফোন আরও ফাস্ট কাজ করবে।
৩.আপনার অপ্রয়োজনীয় ও অব্যবহৃত অ্যাপ সরিয়ে ফেলুন
অনেক সময় আমরা একটি অ্যাপ ইন্সটল করি, কিন্তু কয়েকদিন পর সেটি আর ব্যবহার করি না। কিন্তু সেটি ফোনে থেকেই যায় এবং স্টোরেজ দখল করে রাখে। অনেক অ্যাপ আবার ব্যাকগ্রাউন্ডেও কাজ চালিয়ে যায়, ফলে স্মার্টফোন(Smartphone) আরও ধীরগতির হয়ে পড়ে।
সমাধান:
প্রথমেই আপনার ফোনে কোন অ্যাপগুলো সবচেয়ে কম ব্যবহার করছেন, তা নির্ধারণ করে দিনশেষে বা মাসে অন্তত একবার সেগুলো আনইন্সটল করুন। Android-এর “Unused apps” ফিচার ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো শনাক্ত করা যায়। এই অভ্যাস গড়ে তুললে শুধু স্টোরেজই খালি হবে না, ফোনের গতি এবং ব্যাটারির আয়ুও বাড়বে।
৪. নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন
অনেকে মনে করেন যে সফটওয়্যার আপডেট মানে শুধু নতুন ফিচার আসা, তাই প্রয়োজন মনে না হলে আপডেট করেন না। কিন্তু বাস্তবে, প্রতিটি আপডেটের মধ্যে থাকে গুরুত্বপূর্ণ বাগ ফিক্স, পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজেশন এবং নিরাপত্তা উন্নয়ন। এসব আপডেট না করলে ফোন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়ে।
সমাধান:
WiFi সংযোগ থাকলে সময়মতো ফোনের সিস্টেম আপডেট চেক করুন।
এছাড়া সফটওয়্যার হালনাগাদ থাকলে ফোন যেমন দ্রুত কাজ করে, তেমনি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়।
৫. ব্যাটারির ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনা
স্মার্টফোন(Smartphone) ধীরগতির হওয়ার পেছনে ব্যাটারির ভূমিকা অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে।
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা যদি সর্বোচ্চ থাকে, অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে (Always-on Display) ফিচার যদি চালু থাকে কিংবা ফোন সারাক্ষণ চার্জে লাগানো থাকে—তাহলে প্রসেসরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর ফলে ফোন ধীরে চলে, মাঝে মাঝে হ্যাং করে যায়।আর একারনে ফোন অনেকটা স্লো হয়ে যায় যেটা আমরা বুঝতে পারি না।
সমাধান:
প্রয়োজন অনুযায়ী Brightness অটো মোডে রাখুন বা কমিয়ে দিন।
Always-on Display, Live Wallpaper ইত্যাদি ফিচার বন্ধ রাখুন,এটা ফোনের জন্যও ভালো।
Battery Saver মোড সক্রিয় করুন, বিশেষ করে যখন চার্জ কম থাকে।
এই অভ্যাসগুলো ফোনের গতি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৬. একসাথে অনেক ফাইল না চালানো
আমরা অনেক সময় একই সাথে অনেক কাজ করি,যেমন গেইম খেলতে খেলতে আপনার ইচ্ছা হল আপনি খেলার খবর দেখবেন,ব্যাকগ্রাউন্ডে গেইম রেখে আপনি youtube এ ঢুকলেন,আবার সেটা শেষ করে,অন্য আরেকটা software এ ঢুকলেন আর এভাবে একসাথে অনেক কাজ একসাথে করলে ফোন স্লো কাজ করতে পারে।
তাই যদি যখন আপনার যে software দরকার সেটা ব্যবহার করুন এবং পারলে খুব বেশি কাজ একসাথে করতে যাবেন না,তাহলে দেখবেন ফোন ভালো পার্ফোম্যান্স দেখাচ্ছে।
এছাড়াও আরো কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন। যেমন-
***লাইভ ওয়ালপেপার বা ভারী থিম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
***Home screen-এ খুব বেশি উইজেট না রাখাই ভালো
***SD Card ব্যবহার করলে ভালো মানের এবং দ্রুত গতির কার্ড ব্যবহার করুন
***মাঝে মাঝে ফোন রিস্টার্ট করে RAM রিফ্রেশ করুন,RAM যত রিফ্রেশ থাকবে আপনার ফোন তত ভালো performance দেখাবে।
সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা বলতেই পারি নতুন ফোন কেনা সব সময় সমাধান নয়। সামান্য কিছু পরিবর্তন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণই পুরোনো ফোনকে আগের মতো গতিশীল ও কার্যকর রাখতে পারে। উপরের সহজ পাঁচটি পদ্ধতি নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনার ফোনও ধীরগতির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
স্মার্টফোনের (Smartphone) দীর্ঘ আয়ু এবং সেরা পারফরম্যান্সের জন্য এখনই আপনার ফোনের দিকে একটু বাড়তি মনোযোগ দিন।সামান্য কিছু সময় হাতে নিয়ে একটু কাজ করলেই দেখবেন আপনার পুরনো ফোন আর পুরনো মনে হচ্ছে না,সবেমাত্র শোরুম থেকে নিয়ে এসেছেন।