মো: সাকিব হোসেন: দুর্দান্ত ডিজাইন,অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং আকর্ষণীয় ক্যামেরা নিয়ে হাজির Xiaomi Poco F7 মোবাইল।
২০২৫ সালটা স্মার্টফোন বাজারের জন্য দারুণ এক বছর। এখনকার মিড-রেঞ্জ ফোনগুলো এমন সব ফিচার নিয়ে আসছে, যা একসময় শুধু ফ্ল্যাগশিপ ফোনেই দেখা যেত। মাত্র ৩০,০০০-৪০,০০০ টাকার মধ্যেই এখন অনেক ভালো ফোন পাওয়া যাচ্ছে। Xiaomi Poco F7 ঠিক সেই দিকেই নজর রাখছে — যারা কম দামে ভালো পারফরম্যান্স, আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং দৈনন্দিন ব্যবহারে নির্ভরযোগ্যতা খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে অন্যতম সেরা অপশন।
আমি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে Xiaomi Poco F7 ব্যবহার করছি — এবং এটি যে শুধু ভালো পারফর্ম করছে তাই নয়, বরং আমার প্রতিদিনের ফোন হিসেবে বেশ মানিয়ে গেছে। আজ আমি এই ফোনের ডিজাইন, ডিসপ্লে, পারফরম্যান্স, ব্যাটারি, ক্যামেরা ও অন্যান্য দিকগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো, যেন আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই ফোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা।
Design(ডিজাইন): চোখে পড়ার মতো প্রিমিয়াম
প্রথমেই যেটা বলতে হয় Xiaomi Poco এবার সত্যিই ডিজাইনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। Poco F7-এর ডিজাইন আগের মডেলগুলোর চেয়ে একেবারেই আলাদা এবং উন্নত। আমি যেটা ব্যবহার করেছি সেটা Cyber Silver Edition, যার পেছনের অংশটি গ্লাস দিয়ে তৈরি। শুধু গ্লাস ব্যাক বললেই যথেষ্ট নয় — এতে আছে সাইবারপাঙ্ক থিমের জ্যামিতিক ডিজাইন, যার ফলে এটি দেখতে হয় একদম আলাদা।
পিছনে থাকছে Poco লোগো আর ছোট করে ‘Snapdragon’ ব্র্যান্ডিং — দেখে মনে হয় যেন কোনো সাই-ফাই সিনেমার ডিভাইস। এমনকি আমার বন্ধুরা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখার পর সবাই বলেছে, “এই দামে এমন লুক আশা করিনি!” সত্যিই, ফোনটা দেখতে অনেক প্রিমিয়াম।
ফোনটির ফ্রেম এবার অ্যালুমিনিয়াম ম্যাট ফিনিশড, আগের Poco ফোনগুলোর প্লাস্টিক ফ্রেমের চেয়ে অনেক বেশি শক্তপোক্ত এবং প্রিমিয়াম ফিল দেয়। হাতে নিলে ফোনের ওজন টের পাওয়া যায় ঠিকই, কারণ এটি প্রায় ২১৫ গ্রাম, তবে গ্রিপ খুব ভালো।
একটি ছোট সমস্যা — গ্লাস ব্যাকটি অনেক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ধরে, ফলে পরিষ্কার রাখতে হলে বারবার মোছার প্রয়োজন হয়। বক্সে একটি কালো সিলিকন কেস দেওয়া আছে, কিন্তু আমি মনে করি একটি ট্রান্সপারেন্ট কেস দিলে ডিজাইনটা দেখা যেত আরও ভালোভাবে।
এক দারুণ চমক হলো, Poco F7 হলো প্রথম F সিরিজ ফোন যাতে IP68 ও IP69 সার্টিফিকেশন রয়েছে। মানে এটি পানি ও ধুলাবালির হাত থেকে নিরাপদ, যা এই দামের ফোনে সচরাচর পাওয়া যায় না।
ডিসপ্লে: ভিডিও প্রেমীদের জন্য আদর্শ
Poco F7-এ রয়েছে একটি বড়সড় ৬.৮৩ ইঞ্চির AMOLED স্ক্রিন। রেজোলিউশন ১.৫কে, আর রিফ্রেশ রেট ১২০Hz — যার মানে হলো সবকিছুই চলবে আরও স্মুথভাবে। আপনি যখন স্ক্রল করছেন, সোশ্যাল মিডিয়া দেখছেন বা গেম খেলছেন, তখন এই ডিসপ্লের মসৃণতা আপনাকে বুঝিয়ে দেবে এটি কতটা উন্নত।
এই স্ক্রিনটি HDR10+ সাপোর্ট করে এবং Poco দাবি করেছে যে এটি ১,৭০০ নিট পর্যন্ত উজ্জ্বলতা দিতে পারে। বাস্তবে ব্যবহার করে দেখেছি, রোদে দাঁড়িয়েও স্ক্রিন দেখা যায় খুব সহজেই — এমনকি দিল্লির রোদেও স্পষ্ট ছিল। যারা Netflix, YouTube বা অন্য ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটে বেশি সময় কাটান, তাদের জন্য এই ডিসপ্লে এক কথায় দারুণ।
পারফরম্যান্স: গেমিং হোক বা দৈনন্দিন ব্যবহার — একদম স্মুথ
এই ফোনের সবচেয়ে বড় পাওনা হলো এর Snapdragon 8s Gen 4 চিপসেট। এটি খুব কাছাকাছি পারফর্ম করে Galaxy S24 Ultra-তে থাকা Snapdragon 8 Gen 3 এর সঙ্গে, অথচ দামে অনেক কম। ফলে যারা পারফরম্যান্সকে গুরুত্ব দেন কিন্তু বাজেট সীমিত, তাদের জন্য এটি একটি গোল্ডেন চয়েস।
আমি Genshin Impact, Asphalt 9, Wreckfest-এর মতো হেভি গেম খেলেছি — পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিল। তবে দীর্ঘ সময় গেম খেললে ফোনটি কিছুটা গরম হয়ে যায়, এবং তখন চিপসেট নিজেই থ্রটল করে ফ্রেমরেট একটু কমিয়ে দেয় যাতে অতিরিক্ত তাপ না তৈরি হয়। আপনি যদি কেস ব্যবহার করেন, তাহলে গরম হওয়া কিছুটা কমে যায়।
দৈনন্দিন কাজ যেমন কল করা, WhatsApp, ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ছবি তোলা — সবই একদম স্মুথভাবে চলে। আমি ব্যবহার করেছি ১৬ জিবি র্যাম ভেরিয়েন্ট, এবং কোনো ল্যাগ বা হ্যাং পাইনি।
সফটওয়্যার ও আপডেট: এখন আরও পরিণত
ফোনটিতে রয়েছে HyperOS 2, যা Android 15 ভিত্তিক Xiaomi-এর নিজস্ব ইউজার ইন্টারফেস। আগের MIUI-র চেয়ে এটা অনেক ক্লিন, মসৃথ এবং কম বাগি।
তবে অনেকেই হয়তো Samsung বা Pixel-এর স্টক Android ইউজার ইন্টারফেস পছন্দ করেন — তাদের কাছে HyperOS একটু বেশি কাস্টমাইজড মনে হতে পারে। কিন্তু কিছুদিন ব্যবহার করলে সহজেই অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় খবর হলো — Poco F7 পাচ্ছে ৪ বছরের OS আপডেট ও ৬ বছরের সিকিউরিটি আপডেট। এটি এই দামের ফোনে খুবই বিরল। এর মানে হলো আপনি দীর্ঘদিন ধরে এই ফোনটি নিরাপদ ও আপডেটেড অবস্থায় ব্যবহার করতে পারবেন।
ফোনটিতে রয়েছে কিছু AI ফিচার, যেমন:
AI লেখালেখি সহায়ক
গ্যালারির ছবি এডিট করার AI টুল
ভয়েস স্পিচ রিকগনিশন
লাইভ ট্রান্সলেশন
ব্যবহার করে দেখেছি, বেশিরভাগ ফিচার ঠিকঠাক কাজ করে। যদিও কিছু ফিচার এখনও তেমন দরকারি মনে হয়নি, কিছুটা “গিমিক” বলে মনে হয়েছে।
🔸 ক্যামেরা: ভালো, তবে সেরা নয়
Poco F7-এর ক্যামেরা সেটআপ খুবই ব্যালেন্সড। মেইন ক্যামেরা ৫০ মেগাপিক্সেল, যার ছবি দিনের আলোতে দারুণ আসে শার্পনেস ভালো, রঙ অনেকটাই বাস্তবসম্মত। ভিজিবিলিটি ও এক্সপোজারও ঠিকঠাক ছিল।
আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা ১২ মেগাপিক্সেল — এটি সাধারণ মানের। দিনের আলোতে ভালো ছবি দিলেও রাতে বা কম আলোতে তা ঠিকমতো পারফর্ম করে না। সেলফির জন্য আছে ২০ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা — যেটা আলো ভালো থাকলে বেশ ভালো ছবি তোলে, তবে রাতের সময় ছবি তুললে শার্পনেস একটু কমে যায়।
যদি আপনি একজন ক্যামেরা-ভিত্তিক ইউজার হন — অর্থাৎ মোবাইল ফটোগ্রাফি করেন, ইনস্টাগ্রামে অ্যাক্টিভ, ভিডিও ব্লগ করেন — তাহলে হয়তো আপনি কিছুটা মিস করবেন। তবে এই দামের মধ্যে অন্য যেসব ফোন রয়েছে, তাদের তুলনায় Poco F7 মোটামুটি ভালো ক্যামেরা অফার করছে।
🔸 ব্যাটারি: সারাদিন নিশ্চিন্ত
ফোনটির ব্যাটারি সত্যিই প্রশংসনীয় — ৭,৫৫০mAh সিলিকন-কার্বন ব্যাটারি। আমি প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও দেখা, কিছু গেম, কল ও মেসেজিং ব্যবহার করেছি — এবং প্রতিবারই চার্জ একবার দিয়ে পুরোদিন চালিয়ে নিতে পেরেছি।
Wi-Fi ব্যবহারের সময় ব্যাটারি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে যেদিন অনেকক্ষণ ধরে গেম খেলেছি, সেদিন ব্যাটারি একটু দ্রুত শেষ হয়েছে — হয়তো ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই ৫০% চার্জ শেষ হয়ে গেছে। এটা হতে পারে সফটওয়্যার ইস্যু, Poco ভবিষ্যতে কোনো আপডেটে এটি ঠিক করে দিতে পারে।
চার্জিংও খুব দ্রুত — ফোনটি ১২৫W ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে, যদিও বক্সে চার্জার দেওয়া নেই। আলাদা করে চার্জার কিনতে হবে।
🔸 কাদের জন্য Poco F7?
এই ফোনটি বিশেষভাবে উপযুক্ত যাঁদের জন্য:
1.যারা মিড-রেঞ্জে একটি পাওয়ারফুল পারফর্মিং ফোন খুঁজছেন
2.যারা চান বড় ডিসপ্লে, ভালো ব্যাটারি এবং দুর্দান্ত ডিজাইন
3.যারা একটু আলাদা ও ফিউচারিস্টিক লুকের ফোন ব্যবহার করতে পছন্দ করেন
4.যারা ফোনের সফটওয়্যার ও আপডেট বিষয়েও সচেতন
5.তবে এই ফোনটি হয়তো সেরা অপশন নয়:
6.যারা ফোন দিয়ে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি করতে চান
7.যারা অনেকক্ষণ ধরে হেভি গেম খেলে থাকেন — যেমন PUBG বা COD মোবাইল ৪-৫ ঘণ্টা একটানা খেলেন
এই ধরনের ব্যবহারকারীদের জন্য iQOO Neo 10R বা Infinix GT 30 Pro ভালো বিকল্প হতে পারে।
Poco F7 কি ২০২৫ সালের সেরা phone?
সবকিছু বিচার করে বলা যায়, Poco F7 একটি অলরাউন্ডার ফোন। কিছু ছোটখাটো সীমাবদ্ধতা থাকলেও (যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট পড়া, চার্জার না থাকা), ফোনটি দাম অনুযায়ী এমন পারফরম্যান্স ও ফিচার অফার করছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
Xiaomi Poco F7 price in Bangladesh :
বাংলাদেশের বাজারে ফোনটির দাম ধরা হয়েছে৷ প্রায় ৪৮০০০ টাকা।যদিও এটা unofficial প্রাইস।
আপনি যদি চান একটি ভারসাম্যপূর্ণ ফোন — যা দেখতে সুন্দর, চালাতে স্মুথ, ব্যাটারি চলে সারাদিন, আর দামেও সাশ্রয়ী — তাহলে Poco F7 হতে পারে আপনার জন্য সেরা চয়েস।