আজকাল স্মার্টফোন কেনা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। বিশেষ করে মাঝারি দামের ফোন বেছে নেওয়া। আগে যেখানে আমরা সহজে বেছে নিতে পারতাম এমন ফোন যা সাশ্রয়ী, ব্যবহার সহজ এবং বেশি ঝামেলা ছাড়া চলবে, এখন মাঝারি দামের ফোনের মধ্যেও ভাগ ভাগ হয়ে গেছে। যেমন—প্রিমিয়াম মিড-রেঞ্জ, বাজেট ফ্ল্যাগশিপ, লাইট ভার্সন ইত্যাদি। এর ফলে অনেক সময় এমন ফোন পাওয়া কঠিন হয় যা সহজ, নির্ভরযোগ্য এবং দৈনন্দিন কাজে ভালো হয়।
এই ধরনের বাজার পরিস্থিতিতে OnePlus Nord CE 5 এসেছে। এ ফোনে বড় কোনো দারুণ নতুন ফিচার বা অত্যাধিক প্রযুক্তি নেই, কিন্তু যা দরকার তা ভালোভাবে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে—বিশেষ করে শক্তিশালী ব্যাটারি, ভালো পারফরম্যান্স এবং দীর্ঘমেয়াদী সফটওয়্যার সাপোর্ট।
ডিজাইন: সাধারণ কিন্তু আরামদায়ক
OnePlus Nord CE 5-এর ডিজাইন খুব বেশি ঝকঝকে বা আধুনিক মনে হবে না। বরং এটি একটু মোটা এবং লম্বাটে। এর পিছনের অংশ এবং ফ্রেম উভয়ই একটু মোটা হওয়ায় ফোনটি হাতে ধরলে একটু ভারী মনে হতে পারে। ওজন প্রায় ১৯৯ গ্রাম এবং মোটা প্রায় ৮.২ মিলিমিটার, যা ভারি হলেও যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ।
ফোনের আকার দীর্ঘ হওয়ায় এটি দুই হাতে ধরলে ব্যবহার আরামদায়ক হয়। ফোনের পেছনের অংশে Nexus Blue, Black Affinity এবং Marble Mist নামের তিন রঙ পাওয়া যায়। আমার কাছে Nexus Blue ছিল, যা দেখতে সুন্দর এবং প্রাণবন্ত মনে হয়েছে।
যদিও ফোনটি হাতে একটু ভারী, তবে এর ব্যাটারির মাপ বিবেচনায় এটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। যারা মোটা ফোনে অভ্যস্ত নন, তাদের জন্য প্রথমদিকে একটু ভারি লাগতে পারে।
ডিসপ্লে: বড় ও উজ্জ্বল, কিন্তু সূর্যের আলোতে কিছুটা অস্পষ্ট
ফোনটির স্ক্রিন বড়—৬.৭৭ ইঞ্চির AMOLED, যার রিফ্রেশ রেট ১২০Hz। অর্থাৎ স্ক্রিন দ্রুত ও মসৃণ মোশন দেখাতে সক্ষম। পিক ব্রাইটনেস ১,৪৩০ নিট, যা ফোনটিকে খুব উজ্জ্বল করে তোলে। HDR সাপোর্ট থাকার কারণে ছবির রঙ এবং কনট্রাস্ট ভালো হয়।
আমি এই ফোনে ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ সিনেমার ট্রেইলার দেখেছি। ডিসপ্লের রঙিন ও স্পষ্ট ছবি দেখে অভিজ্ঞতা সিনেমার মতোই মনে হয়েছে। তবে খোলা আকাশে সূর্যের আলোতে স্ক্রিন একটু কম স্পষ্ট হয়।
ফোনের স্পর্শ প্রতিক্রিয়া বা হ্যাপটিক ফিডব্যাক বেশ নরম, যা অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনের থেকে আলাদা। Aqua Touch ফিচার থাকায় ভেজা বা তেল-মাখা আঙুলেও স্ক্রিন ব্যবহার করা যায়। দিল্লির ভারি বৃষ্টির সময় আমি এই ফিচার বেশ কাজে লাগিয়েছি। তবে ফোনের সঙ্গে পাওয়া কেস সহজেই দাগ ধরে।
পারফরম্যান্স: দ্রুত এবং শক্তিশালী, তবে গেমিংয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা
ফোনটির মস্তিষ্ক MediaTek Dimensity 8350 Apex চিপসেট। এটি ৪ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি এবং শক্তি সাশ্রয়ী। আমি ৮ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজের ভার্সন পেয়েছি। যারা বেশি চায়, তাদের জন্য ১২ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজের অপশন আছে।
এই চিপ দিয়ে পপুলার গেম যেমন BGMI, Call of Duty মোবাইলে খেলা যায় ভালভাবেই। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ গেম খেললে ফোন একটু গরম হয় এবং মাঝে মাঝে ফ্রেম ড্রপ হয়।
ফোন Oxygen OS 15 দিয়ে চলে, যা Android 15 ভিত্তিক। ইউজার ইন্টারফেস মসৃণ এবং পরিষ্কার, তবে খুব দ্রুত নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, OnePlus ৬ বছরের সফটওয়্যার ও সিকিউরিটি আপডেট দেয়, যা মিড-রেঞ্জ ফোনে বিরল।
ব্যাটারি: বড় এবং দ্রুত চার্জ হয়
Nord CE 5-এর সবচেয়ে বড় ফিচার এর ৭১০০mAh বিশাল ব্যাটারি। আমি সাধারণ ব্যবহার করে দুই দিন চার্জ ছাড়া চালিয়েছি। এর মধ্যে ছিল গেম খেলা, ক্যামেরা ব্যবহার, ৫জি চালানো, মোবাইল হটস্পট চালানো ও সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা।
৮০W SuperVOOC ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে এক ঘণ্টার মধ্যে পুরো ব্যাটারি পূর্ণ হয়। এছাড়া স্মার্ট ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট ও ব্যাটারি হেলথ ইঞ্জিন রয়েছে, যা চার্জিং সাইকেল কমিয়ে ব্যাটারির আয়ু বাড়ায়।
ক্যামেরা: দিনের আলোতে ভালো, AI ফিচার বেশ কাজের
ফোনে ৫০ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা আছে Sony LYT-600 সেন্সর ও অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) সহ। দিনের আলোতে ছবি পরিষ্কার, আলো-ছায়া ভালো থাকে এবং রং সঠিক আসে।
৮ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরাও রয়েছে। ভিডিওর ক্ষেত্রে ৪কে রেজোলিউশনে ৬০fps পর্যন্ত ভিডিও করা যায় এবং OIS থাকার কারণে ভিডিও বেশ স্থির হয়।
OnePlus কিছু AI ফিচার দিয়েছে, যেমন AI VoiceScribe, AI Translation, AI Call Assistant। ‘Mind Space’ ফিচারটি বেশ ভালো। এতে তিন আঙুল দিয়ে উপরে সোয়াইপ করলে স্ক্রিনের কন্টেন্ট কেপচার হয় এবং AI স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার সারাংশ তৈরি করে। এটি খবর পড়া বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ট্র্যাক করার জন্য অনেক কাজে লাগে।
স্পিকার ও অন্যান্য ফিচার
ফোনে একটাই বটম-ফায়ারিং স্পিকার আছে। এটি উচ্চতর ভলিউমে বাজালে শব্দটা টিনি এবং পরিষ্কার শোনা যায় না। যারা ভালো সাউন্ড পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি খানিকটা কম ভালো হতে পারে।
ফোনে OnePlus-এর বিখ্যাত এলার্ট স্লাইডার নেই, যা অনেক ব্যবহারকারী পছন্দ করেন। এছাড়া Nord 5 মডেলের প্লাস কী এখানে পাওয়া যায় না।
ভালো দিকগুলো
বড় ও উজ্জ্বল AMOLED ডিসপ্লে
শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী ৭১০০mAh ব্যাটারি
৬ বছরের সফটওয়্যার ও সিকিউরিটি আপডেট
প্রয়োজনীয় AI ফিচার ও নতুন Mind Space
মসৃণ ও পরিষ্কার Oxygen OS ১৫
খারাপ দিকগুলো
দীর্ঘ গেমিংয়ে গরম হওয়া ও ফ্রেম ড্রপ
সূর্যের আলোতে স্ক্রিনের কম স্পষ্টতা
নরম হ্যাপটিক্স ফিডব্যাক
একটাই স্পিকার, যা উচ্চ ভলিউমে ভালো না শোনায়
এলার্ট স্লাইডার ও প্লাস কী নেই
কেন কেনা উচিত?
যদি আপনি একটি সহজ, নির্ভরযোগ্য, শক্তিশালী ব্যাটারি ও দীর্ঘ সফটওয়্যার সাপোর্টসহ ফোন খুঁজছেন, তাহলে OnePlus Nord CE 5 চমৎকার অপশন। এর দাম মাত্র ২৪,৯৯৯ টাকা থেকে শুরু, যা তুলনামূলক সাশ্রয়ী।
তবে যারা ভারী গেমার বা ক্যামেরা পছন্দ করেন, তাদের জন্য হয়তো অন্য কোনো বিকল্প দেখতে হবে।OnePlus Nord CE 5 এমন ফোন যা বেশি জটিলতা ছাড়া দৈনন্দিন কাজের জন্য উপযোগী। এতে বড় স্ক্রিনে সিনেমা উপভোগ করা যায়, পারফরম্যান্স ভালো, এবং ব্যাটারি বেশ শক্তিশালী। দীর্ঘ সময় সফটওয়্যার আপডেট পাওয়া যায়, যা এর বড় প্লাস পয়েন্ট। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এই দামের মধ্যে এটি ভালো মূল্য দেয়।