Motorola গত কয়েক বছর ধরে তাদের Razr সিরিজের ফোল্ডেবল ফোনগুলোর উন্নয়নে কাজ করছে। বিশেষ করে গত বছর রিলিজ হওয়া Razr 50 Ultra ছিল একটি বড় অগ্রগতি। তবে তখনো কিছু সমস্যা ছিল, যেমন ব্যাটারি লাইফ কম, ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময় গরম হওয়া, এবং প্রপার ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসরের অনুপস্থিতি।
এই বছর তারা নিয়ে এসেছে Motorola Razr 60 Ultra। এবার তারা শুধু পুরনো সমস্যাগুলো ঠিকই করেনি, বরং নতুন ফিচার, বিশেষ করে AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সংযোজন করেছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে — এই ফোন কি সত্যিই আগের চেয়ে ভালো হয়েছে? এবং, এর দাম অনুযায়ী এটা কি কিনে ফেলা উচিত? চলুন সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ করি।
ডিজাইন: আগের মতোই সুন্দর, তবে আরও উন্নত
ভাঁজ অবস্থায় সাইজ: 88.1 x 74 x 15.7 মিমি।
খোলা অবস্থায় সাইজ: 171.5 x 74 x 7.2 মিম
ওজন: ১৯৯ গ্রডাস্ট ও ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স: IP48 রেটিং
ফোনটির ডিজাইন অনেকটাই আগের Motorola Razr 60 ultra এর মতো। তবে এবার ফোনটির ফ্রেম ম্যাট ফিনিশে এসেছে, আগের গ্লসি লুকের জায়গায়। এটি দেখতে আরও প্রিমিয়াম লাগলেও, হাতে একটু বেশি পিছলে যায়। তাই বক্সে থাকা কেসটি ব্যবহার করা ভালো।
এই বছরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর প্যান্টোন কালার ফিনিশ। তিনটি অপশন পাওয়া যাচ্ছে:
Mountain Trail: কাঠের মত ব্যাক ডিজাইন (পুরোনো Moto X-এর মত)
Rio Red: লাল রঙের লেদার ফিনিশ
Scarab (আমাদের রিভিউ ইউনিট): গাঢ় সবুজ রঙ এবং আলকানটারা ফিনিশ
এই ডিজাইনগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি মজবুতও। ফোনের পেছনের অংশ বেশ টেকসই এবং সহজে স্ক্র্যাচ পড়ে না।
AI কী: নতুন বাটন, নতুন অভিজ্ঞতা
এই ফোনে নতুন একটি বাটন এসেছে, যার নাম AI কী। এটি ফোনের বাঁ পাশে থাকে এবং চাপ দিলে চালু হয় Moto AI। এই AI দিয়ে আপনি করতে পারবেন:
Update Me: আপনার সব নোটিফিকেশন ভয়েসে পড়ে শোনায়
Remember This: ছবি, স্ক্রিনশট বা ভয়েস দিয়ে কিছু মনে রাখে
Take Notes: ভয়েস রেকর্ড করে টেক্সটে কনভার্ট করে
এই ফিচারগুলো কাজ করে ঠিকই, কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতা আছে:
AI অনেক সময় ধীরগতির
বারবার বাটন চাপতে হয়, যা বিরক্তিকর
সহজ কাজ যেমন অ্যালার্ম সেট করাও সময় নেয়
Google Gemini অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক সময় সেটিকেই ব্যবহার করেছি।
ডিসপ্লে: এখনো শ্রেষ্ঠ মানের
কভার ডিসপ্লে: ৪ ইঞ্চি, 1272×1080 পিক্সেল, 165Hz
মূল ডিসপ্লে: ৭ ইঞ্চি, 1224×2912 পিক্সেল, 165Hz
ডিসপ্লে টাইপ: pOLED (LTPO)
ব্রাইটনেস: মেইন ডিসপ্লে ৪৫০০ নিট, কভার ডিসপ্লে ৩০০০ নিট
ফোনের দুইটি ডিসপ্লেই দুর্দান্ত। কভার ডিসপ্লে দিয়ে আপনি প্রায় সব কাজ করতে পারবেন — যেমন মেসেজ দেখা, কল রিসিভ, এমনকি অ্যাপ চালানো। অনেক ইউজার Samsung Z Flip 7-এর কভার স্ক্রিন পছন্দ করলেও, Motorola এখনো বেশি কার্যকর স্ক্রিন দিচ্ছে।
ডিসপ্লে অনেক উজ্জ্বল হয়, তাই রোদে ব্যবহার করতেও সমস্যা হয় না। স্ক্রিনে প্রটেক্টর আগে থেকেই লাগানো থাকে, কিন্তু এটি রিডেবিলিটি বা কালারকে খুব একটা প্রভাবিত করে না।
সফটওয়্যার ও ইউজার ইন্টারফেস (UI)
অ্যান্ড্রয়েড ১৫
ফোনে কিছু প্রি-ইনস্টল অ্যাপ যেমন Facebook, LinkedIn ও Amazon Music থাকে। এগুলো অবশ্য সহজেই আনইনস্টল করা যায়। UI সহজ ও ক্লিন, এবং কাস্টমাইজেশনের অপশনও খুব ভালো।
🔶 পারফরম্যান্স: এবার সত্যিকারের ফ্ল্যাগশিপ
প্রসেসর: Qualcomm Snapdragon 8 Elite (4.3GHz, 3nm)
RAM: ১৬GB
স্টোরেজ: ৫১২GB (UFS 4.0)
এইবার Motorola Razr 60 ultra দিয়েছে সেরা প্রসেসর। গত বছর Snapdragon 8s Gen 3 ব্যবহার করা হয়েছিল, যা পুরোপুরি ফ্ল্যাগশিপ ছিল না। এবার সেই ভুল শুধরানো হয়েছে।
ফোনটি একদম স্মুথ পারফর্ম করে। কোনো ল্যাগ, হ্যাং বা গ্লিচ দেখা যায়নি। হেভি গেমিং ও মাল্টিটাস্কিং-এও এটি দারুণ পারফর্ম করেছে।
তবে কিছু জায়গায় গরম হওয়ার সমস্যা দেখা যায়, বিশেষ করে ক্যামেরা বা ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময়।
ক্যামেরা ও ব্যাটারি:
এই রিভিউয়ের ফোকাস ডিজাইন ও পারফরম্যান্স হলেও, ক্যামেরা এবং ব্যাটারি নিয়েও বলা যায়:
ক্যামেরা পারফরম্যান্স ভালো, তবে স্যামসাং বা গুগলের লেভেলের নয়
ব্যাটারি লাইফ আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে, একদিন আরামসে চলে
ফাস্ট চার্জিং রয়েছে, তবে ওয়্যারলেস চার্জিং নেই
শেষ কথা: কিনবেন কি না?
দাম: প্রায় ১,৬০,০০০ টাকা প্রায়
পছন্দের কারণ:
-আকর্ষণীয় ও শক্তপোক্ত ডিজাইন
-দুর্দান্ত ডিসপ্লে
-ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর
-কার্যকর কভার ডিসপ্লে
-AI ফিচারগুলো নতুন ও দরকারি
যা উন্নত হওয়া দরকার:
-Moto AI এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়
-ফোনটি একটু ভারি ও পিছলে যায়
-গরম হওয়ার প্রবণতা কিছুটা আছে
আমার মতামত:
যদি আপনি একটি প্রিমিয়াম ফোল্ডেবল ফোন চান, যেটা দেখতে চমৎকার এবং পারফরম্যান্সেও শক্তিশালী, তাহলে Motorola Razr 60 Ultra একটি দারুণ পছন্দ হতে পারে। তবে Moto AI থেকে তেমন কিছু আশা না করাই ভালো।তবে ফোল্ডেবল হিসেবে এর লুকিং সত্যি অসাধারণ।