আমাদের প্রতিদিনের জীবনে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, হেডফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো যেন অদৃশ্যভাবে জড়িয়ে গেছে। কাজ, বিনোদন, শিক্ষা সব জায়গায় এসব যন্ত্রের ব্যবহার অপরিহার্য। তবে প্রতিদিন এসব ডিভাইস ব্যবহার করতে করতে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে, এগুলো পরিষ্কার করাও জরুরি।
ডিভাইসগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করলে শুধু দেখতে খারাপই লাগে না, বরং এগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। আরও খারাপ বিষয় হলো, এতে জমে থাকা ধুলাবালি ও জীবাণু আমাদের শরীরের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ডিভাইস কানে বা হাতে সরাসরি ব্যবহার করা হয়, যেমন হেডফোন বা এয়ারপড, সেগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তাই চলুন জেনে নেই, কীভাবে নিরাপদে ও সহজভাবে এসব যন্ত্র পরিষ্কার রাখা যায়।
শুরুতে কী করবেন?
প্রথমেই দেখে নিতে হবে, আপনার যন্ত্রটি নির্মাতা কোম্পানির কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে কি না। অনেক সময় কোম্পানিগুলো তাদের ওয়েবসাইটে পরিষ্কার করার নিয়ম দিয়ে রাখে। সেই নিয়ম মেনেই এগোতে হবে।
তারপর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করে নিন:
মসৃণ ও লিন্ট-মুক্ত মাইক্রোফাইবার কাপড়
তুলার কুঁচি বা কাঠি
নরম ব্রাশ (যেমন শিশুদের দাঁতের ব্রাশ)
কমপ্রেসড এয়ার (বাতাসের ক্যান)
আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল (৭০% বা ৯০%)
আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল হলো একধরনের জীবাণুনাশক, যা ইলেকট্রনিক পণ্য পরিষ্কারে খুব কার্যকর। এটি দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং দাগ ফেলে না। তবে সরাসরি যন্ত্রে না দিয়ে আগে একটি কাপড়ে দিয়ে ব্যবহার করাই ভালো। যেকোনো ডিভাইস পরিষ্কার করার আগে সেটি অবশ্যই বন্ধ করে নিতে হবে এবং চার্জিং কেবল বা অন্য অতিরিক্ত অংশ খুলে রাখতে হবে।
কম্পিউটার ও ল্যাপটপ
কম্পিউটার ও ল্যাপটপের কিবোর্ড, মাউস সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এবং দ্রুত নোংরা হয়ে যায়। কিবোর্ডের বোতামের ফাঁকে ধুলা, চুল, খাবারের টুকরো জমে যায়, যা পরিষ্কার না করলে কিবোর্ড কাজ করতে সমস্যা করতে পারে।
এক্ষেত্রে কমপ্রেসড এয়ার ব্যবহার করে বাতাস দিয়ে ফাঁকফোকর পরিষ্কার করা যায়। যদি তা না থাকে, তবে হেয়ার ড্রায়ারকে ঠান্ডা বাতাস মোডে ব্যবহার করে ধুলা উড়িয়ে দেয়া যায়।
আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করে মাউস ও কিবোর্ড মুছে নেয়া যেতে পারে। তবে সরাসরি বোতামের উপর ব্যবহার না করে প্রথমে একটু অংশে ট্রাই করে দেখা ভালো, যেন লেখাগুলো উঠে না যায়।
মাউস পরিষ্কার করতেও একই নিয়ম অনুসরণ করুন। বেবি ওয়াইপ ব্যবহার করলেও খেয়াল রাখবেন, যাতে তা বেশি ভেজা না হয়।
স্ক্রিন পরিষ্কার করবেন যেভাবে
ল্যাপটপ বা মনিটরের স্ক্রিনে আঙুলের ছাপ, ধুলো বা খাবারের দাগ পড়লে পরিষ্কার করা দরকার। স্ক্রিন পরিষ্কারে শুকনা মাইক্রোফাইবার কাপড় সবচেয়ে নিরাপদ। যদি দাগ বেশি হয়, তবে অল্প পরিমাণ পানি ও ভিনেগার মিশিয়ে কাপড় ভিজিয়ে মুছে নিতে পারেন।
গ্লাস ক্লিনার বা টিস্যু পেপার ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে স্ক্র্যাচ পড়তে পারে। মনে রাখবেন, স্ক্রিন খুব সংবেদনশীল, তাই হালকা হাতে মুছতে হবে।
এয়ারপড ও ইয়ারফোন
কানে ঢুকিয়ে ব্যবহার করার ফলে ইয়ারবাডে তেল, ময়লা ও মোম জমে যায়। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করলে কানে সংক্রমণও হতে পারে।
যেসব ইয়ারফোনে সিলিকনের টিপস আছে, সেগুলো খুলে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে পারেন। তবে পানি ব্যবহারের আগে দেখে নিন কোম্পানি অনুমতি দিয়েছে কিনা। উদাহরণস্বরূপ, সনি বলে পানি ব্যবহার না করতে, কিন্তু লজিটেক বা বোস সাবান পানি ব্যবহারে সমস্যা দেখছে না।
অ্যাপলের এয়ারপড পরিষ্কারে শিশুর দাঁতের ব্রাশ, টিস্যু, মাইসেলার ওয়াটার, এবং পরিশোধিত পানি ব্যবহার করা যায়। প্রথমে ব্রাশে মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ইয়ারপডের জালের অংশে হালকা ঘষে ময়লা উঠিয়ে ফেলুন। তারপর টিস্যু দিয়ে মুছে নিন। একইভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে আবার ঘষে মুছে ২ ঘণ্টা শুকিয়ে নিন।
চার্জিং কেসটিও পরিষ্কার করা জরুরি। এতে ব্রাশ দিয়ে ধুলো সরিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে পারেন।
স্মার্টফোন পরিষ্কারের সহজ উপায়
স্মার্টফোন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডিভাইস। প্রতিদিন গড়ে আমরা ২০০ বারের বেশি ফোন ছুঁই! তাই এর গায়ে জমে থাকা জীবাণু খুবই স্বাভাবিক।
অ্যাপল ও স্যামসাং বলছে, ফোন পরিষ্কারে মসৃণ লিন্ট-মুক্ত কাপড় ব্যবহার করা উচিত। কোনো ক্লিনিং স্প্রে, ব্লিচ বা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে স্ক্রিনের তেলরোধী প্রলেপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে হালকাভাবে ফোনের পেছন দিক মুছে নেয়া যায়। কিন্তু চার্জিং পোর্ট, স্পিকার বা মাইক্রোফোনে যেন কিছু ঢুকে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
কিছু বাড়তি টিপস
পরিষ্কার করার সময় যন্ত্র চালু রাখবেন না।
অতিরিক্ত পানির ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
পরিমাণমতো অ্যালকোহল ব্যবহার করুন—বেশি হলে ক্ষতি হতে পারে।
মাসে অন্তত ২ বার নিয়ম করে এসব ডিভাইস পরিষ্কার করুন।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এগুলো যত্ন না নিলে সহজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে যেমন যন্ত্রের আয়ু বাড়বে, তেমনি আমাদের শরীরও থাকবে নিরাপদ।
তাই আজ থেকেই সময় বের করে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, হেডফোন সব পরিষ্কার রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিজের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি একটি জরুরি পদক্ষেপ। তাই ফোনের যত্ন নিন,নিজেও সুস্থ থাকুন।