স্মার্টফোন(smartphone) এখন আর শুধু কথা বলার জন্য নয়। এটা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। অফিসের মেইল দেখা, সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ, ছবি তোলা, অনলাইন ক্লাস, ভিডিও দেখা, সবকিছুতেই এখন স্মার্টফোনের ব্যবহার। কিন্তু অনেকেই আছেন, যাঁদের ফোন কিনে এক বছর পেরোতে না পেরোতেই ধীরে ধীরে কাজ করতে চায় না। হঠাৎ হঠাৎ হ্যাং করে, চার্জ ধরতে চায় না, বা ছোটখাটো সমস্যা শুরু হয়।
এই সমস্যাগুলোর অনেকটাই কিন্তু আমাদের নিজের অসাবধানতার কারণে হয়। স্মার্টফোন(smartphone) যতই দামি বা ব্র্যান্ডেড হোক না কেন, যদি আমরা ঠিকভাবে যত্ন না নেই, তাহলে এর আয়ু কমে যাবে খুব সহজেই। কিন্তু যদি আমরা কিছু সাধারণ অভ্যাস মেনে চলি, তাহলে একটা স্মার্টফোন ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
চলুন এখন জেনে নিই, কীভাবে খুব সহজ কিছু অভ্যাসে আপনার প্রিয় ফোনটিকে দীর্ঘ সময় ভালো রাখবেন-
১. অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
অনেকেরই অভ্যাস, রাতে ঘুমানোর আগে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। সকালে উঠে দেখে ব্যাটারি ফুল চার্জড। এটা শুনতে ভালো লাগলেও, ফোনের ব্যাটারির জন্য এটা মোটেও ভালো না। কারণ, বেশি সময় ধরে ১০০% চার্জে থাকলে ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চেষ্টা করুন যেন আপনার ফোন সবসময় ২০%-৮০% চার্জের মধ্যে থাকে। এতে ব্যাটারির আয়ু অনেকদিন ভালো থাকবে। প্রয়োজনে চার্জিংয়ের জন্য টাইমার ব্যবহার করুন, বা ঘুমানোর সময় চার্জে না দিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে চার্জ দিন।
২. নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন
ফোনে যখনই নতুন কোনো আপডেট আসে, অনেকেই সেটা ইচ্ছা করেই ইগনোর করেন, ভাবেন আপডেট দিলে ফোন স্লো হয়ে যাবে। কিন্তু সত্যি হলো, এসব আপডেটে ফোনের পারফরম্যান্স ভালো হয়, নিরাপত্তা বাড়ে, এবং ছোটখাটো বাগ ঠিক হয়।
নিয়মিত আপডেট দিলে ফোনের সিস্টেম স্মুথ থাকে, নতুন অ্যাপ ভালোভাবে চলে, এবং হ্যাং হওয়া বা স্লো হয়ে যাওয়া কমে যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব আপডেট দিয়ে নিন।
৩. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ও ফাইল মুছে ফেলুন
আমরা প্রায়ই অনেক অ্যাপ ইনস্টল করি, হয়তো এক-দুবার ব্যবহার করেই রেখে দিই। এভাবে ফোনে জমে যায় অনেক অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ও ফাইল। এতে করে ফোনের স্টোরেজ ও র্যাম অপ্রয়োজনীয়ভাবে ভরাট হয়ে যায়, ফলে ফোন স্লো হয়ে যায়।
মাসে অন্তত একবার ফোন ঘেঁটে দেখুন, কোন অ্যাপগুলো আপনি ব্যবহার করেন না, সেগুলো আনইনস্টল করে দিন। অপ্রয়োজনীয় ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টও ডিলিট করে ফোনকে হালকা রাখুন। চাইলে গুগল ড্রাইভ বা অন্য কোনো ক্লাউড স্টোরেজেও ব্যাকআপ রাখতে পারেন।
৪. থার্ড পার্টি চার্জার ব্যবহার না করাই ভালো
প্রয়োজনের সময় চার্জার খুঁজে না পেয়ে অন্য ব্র্যান্ডের বা লোকাল চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ দেওয়া— এটা অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু এতে করে ফোনের ব্যাটারিতে ভেতর থেকে ক্ষতি হতে থাকে।
সবসময় চেষ্টা করুন মূল কোম্পানির চার্জার বা কমপক্ষে ভালো ব্র্যান্ডের চার্জার ব্যবহার করতে। এতে ফোনের ব্যাটারি সুরক্ষিত থাকবে এবং অতিরিক্ত গরম বা শট সার্কিটের আশঙ্কাও কমবে।
৫. ফোন গরম হয়ে গেলে ব্যবহার বন্ধ রাখুন
অনেকক্ষণ গেম খেলা, ভিডিও দেখা বা ভিডিও কল করলে স্মার্টফোন(smartphone) গরম হয়ে যেতে পারে। এ সময় অনেকে গরম ফোন নিয়েই কাজ চালিয়ে যান। এতে ফোনের প্রসেসর এবং ব্যাটারি আরও বেশি চাপের মধ্যে পড়ে এবং স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
যদি দেখেন ফোন গরম হয়ে গেছে, তাহলে কিছু সময় ফোন বন্ধ করে রাখুন। প্রয়োজন হলে রিস্টার্ট দিন। ঠাণ্ডা হওয়ার পর আবার ব্যবহার শুরু করুন।
৬. ফোন পরিষ্কার রাখুন ও কভার ব্যবহার করুন
প্রতিদিনের ব্যবহারে ফোনে ধুলা, তেল, ঘাম জমে যায়। স্ক্রিনে দাগ পড়ে, স্পিকার বন্ধ হয়ে যায় বা চার্জিং পোর্টে ময়লা ঢুকে যায়। এসব থেকে রক্ষা পেতে ফোনে স্ক্রিন প্রটেক্টর ও ভালো কভার ব্যবহার করুন।
প্রতিমাসে অন্তত একবার ফোনটি ভালোভাবে ক্লিনার বা নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। চার্জিং পোর্ট বা স্পিকারে ধুলা ঢুকেছে কিনা দেখে নিন।
৭. শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন
স্মার্টফোন এখন অনেকটা কম্পিউটারের মতোই— এতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল রাখি, ব্যাংকিং করি, পেমেন্ট করি। তাই এর সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। Play Store বা App Store-এ অনেক ভালো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ আছে যেগুলো ফোনকে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার বা হ্যাকিং থেকে রক্ষা করতে পারে।
বিশ্বস্ত কোনো ব্র্যান্ডের অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করে রাখুন এবং নিয়মিত স্ক্যান করে ফোন পরিষ্কার রাখুন।
স্মার্টফোন(smartphone) আমাদের সময়, টাকা ও স্মৃতির একটি বড় অংশ। নতুন ফোন কেনা সহজ, কিন্তু পুরোনো ফোন যত্ন করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করাও একধরনের বুদ্ধিমত্তা। উপরের এই সহজ ৭টি অভ্যাস মেনে চললে, আপনি আপনার প্রিয় স্মার্টফোনটিকে কয়েক বছর পর্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, কোনো বড় সমস্যা ছাড়াই।
তাই আসুন, নিজের স্মার্টফোনের(smartphone) প্রতি একটু যত্নবান হই। কারণ, স্মার্টফোন (smartphone)যত বেশি সময় ভালো থাকবে, আমাদের জীবনের গতি এবং কাজ ততটাই স্মার্ট থাকবে।