স্মার্টফোন আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই স্মার্টফোন চালাতে হলে ব্যাটারি ভালো রাখতে হয়। আর ব্যাটারি ভালো রাখার জন্য দরকার সঠিক চার্জিং পদ্ধতি ও উপযুক্ত চার্জার। অনেকেই মনে করেন, যেকোনো চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ দিলেই হবে। কিন্তু বাস্তবে এটি মোটেও ঠিক না। ভুল চার্জার বা ভুলভাবে চার্জ দিলে ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনে চার্জার আলাদাভাবে কিনতে হয়, কারণ ফোনের বাক্সে আর চার্জার থাকে না। আবার অনেকে এমন চার্জার ব্যবহার করেন যা তাদের ফোনের সাথে মানানসই নয়। এতে করে ফোন গরম হয়ে যায়, ব্যাটারির ক্ষতি হয়, এমনকি ফোন হ্যাং বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়।
চার্জিং পদ্ধতি ঠিক রাখলে বাড়ে ব্যাটারির আয়ু
স্মার্টফোনের ব্যাটারির আয়ু অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কীভাবে ফোন চার্জ করছেন তার ওপর। সব ফোনেরই নির্দিষ্ট একটি চার্জিং ক্ষমতা থাকে, যেমন ১৫ ওয়াট, ২০ ওয়াট, ৩৩ ওয়াট ইত্যাদি। আপনার ফোন যদি সর্বোচ্চ ২০ ওয়াট চার্জিং সাপোর্ট করে, তাহলে আপনি ৬৫ ওয়াট বা ১২০ ওয়াটের চার্জার ব্যবহার করলেও ফোন ততটুকুই চার্জ নেবে যতটুকু তার সার্কিটে অনুমোদিত।
ব্যাটারি কনফিগারেশন বোঝা জরুরি
প্রত্যেকটি স্মার্টফোনে থাকে নির্দিষ্ট ব্যাটারি কনফিগারেশন। এর মধ্যে থাকে চার্জিং সার্কিট, কুলিং সিস্টেম, নিরাপদ চার্জিং সিস্টেম ও অতিরিক্ত কারেন্ট প্রতিরোধের ব্যবস্থা। তাই ফোন কেনার সময় বা চার্জার পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই জানতে হবে, আপনার ফোন সর্বোচ্চ কত ওয়াট পর্যন্ত চার্জিং সাপোর্ট করে। ভুল চার্জার ব্যবহার করলে ব্যাটারি ঠিকমতো চার্জ হবে না, আবার অতিরিক্ত গরম হয়ে ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে।
ফোনের সেরা চার্জার কীভাবে বুঝবেন?
সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সেই চার্জার ব্যবহার করেন যা ফোন কেনার সময় বাক্সের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। কারণ সেটিই ফোনের উপযুক্ত চার্জার। কিন্তু অনেক সময় ফোনের সাথে চার্জার দেওয়া হয় না, তখন কী করবেন?
এই ক্ষেত্রে আপনি ফোনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে নিন ফোনটির সর্বোচ্চ চার্জিং স্পিড কত। তারপর সে অনুযায়ী একটি ভালো কোম্পানির চার্জার কিনে নিন। অবশ্যই চেষ্টা করুন সেই ব্র্যান্ডের চার্জার কেনার, তবে না পাওয়া গেলে সমমানের ভালো মানের চার্জার ব্যবহার করলেই হবে।
স্থানীয় চার্জার ব্যবহার না করাই ভালো
অনেক সময় বাজারে স্থানীয় বা অপরিচিত কোম্পানির সস্তা চার্জার পাওয়া যায়। দাম কম হলেও এগুলো বেশিরভাগ সময় মানসম্পন্ন হয় না। এতে ব্যাটারির বড় ক্ষতি হতে পারে, এমনকি ফোনের সার্কিটও পুড়ে যেতে পারে। তাই শুধু দাম দেখে নয়, মান দেখে চার্জার কেনা উচিত। চিন্তাভাবনা করে একটি ভালো ব্র্যান্ডের চার্জার কিনুন, যাতে আপনার ফোন দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
যদি ফোনের বাক্সে চার্জার না থাকে
অনেক কোম্পানি এখন পরিবেশের কথা ভেবে ফোনের বাক্সে চার্জার দিচ্ছে না। আপনি যদি এমন কোনো ফোন কিনে থাকেন, তবে প্রথমেই জেনে নিন ফোনটির সর্বোচ্চ চার্জিং ক্ষমতা কত ওয়াট। এরপর সে অনুযায়ী চার্জার বেছে নিন। অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের চার্জার কিনুন এবং স্থানীয় চার্জার এড়িয়ে চলুন।
একটি ভালো চার্জার ফোনের ব্যাটারিকে শুধু দ্রুত চার্জই করবে না, বরং সঠিকভাবে চার্জ দিয়ে ব্যাটারির আয়ুও বাড়াবে। তাই চার্জার বাছাই করার সময় ভুল করলে পরে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির ভালো-মন্দ
আজকাল অনেক স্মার্টফোনে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি থাকে। এটি খুব অল্প সময়ে ফোন পুরো চার্জ করে দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই দ্রুত চার্জিং পদ্ধতিতে ব্যাটারির উপর অনেক চাপ পড়ে। ফলে কিছুদিন পরেই ব্যাটারির স্বাস্থ্য (Battery Health) খারাপ হয়ে যেতে পারে।
যদিও এখন অনেক কোম্পানি এই সমস্যা দূর করতে দুটি পৃথক ব্যাটারি ব্যবহার করছে, তারপরও অতিরিক্ত ফাস্ট চার্জিং নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। তাই যদি খুব বেশি তাড়াহুড়া না থাকে, তাহলে ২০-৩০ ওয়াটের মাঝামাঝি স্পিডের চার্জার ব্যবহার করাই ভালো। এতে ফোন ধীরে হলেও নিরাপদভাবে চার্জ হবে এবং ব্যাটারির আয়ু দীর্ঘ হবে।
স্মার্টফোনের যত্ন নিতে হলে শুধু ফোন ভালো হওয়াই যথেষ্ট নয়, ভালো চার্জারও থাকা জরুরি। ভুল চার্জার ফোনের ক্ষতি করতে পারে। তাই সঠিক চার্জার বেছে নেওয়া, নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন জানা, ভালো ব্র্যান্ডের চার্জার ব্যবহার করা ও ফাস্ট চার্জিং নিয়ে সচেতন থাকা—এই কয়েকটি বিষয় ঠিক রাখলে ফোনের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে, আর আপনিও নিশ্চিন্তে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
1 Comment
🥰🥰🥰