টেক দুনিয়ায় শাওমি(Xiaomi)মানেই নতুন কিছু চমক। সাধারণত আমরা শাওমির নাম শুনলেই ভাবি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা স্মার্ট টিভির কথা। কিন্তু এবার শাওমি(Xiaomi)বড়সড় এক চমক নিয়ে এসেছে তারা বাজারে এনেছে নিজেদের প্রথম ইলেকট্রিক SUV (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল)। আর সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো, গাড়িটি উন্মোচনের মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই শাওমি পেয়েছে প্রায় ৩ লাখ প্রি-অর্ডার!
এই ঘটনাকে অনেকেই বলছেন “চীনের গাড়ি শিল্পের এক অলৌকিক মুহূর্ত”। সত্যিই তো—যে কোম্পানিটি এতদিন ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি করতো, তারা হঠাৎ করে গাড়ি নিয়ে এসে এত বিশাল সাড়া পাবে—কে ভাবতে পেরেছিল?
মাত্র দুই মিনিটেই লাখের বেশি বুকিং!
গত বৃহস্পতিবার রাতে শাওমি তাদের SUV মডেল Xiaomi SU7 আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করে। গাড়িটি উন্মোচনের ঠিক দুই মিনিটের মধ্যেই ১ লাখ ৯৬ হাজার পেইড প্রি-অর্ডার চলে আসে। এরপর মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই মোট প্রি-অর্ডারের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৯ হাজার!
এই অসাধারণ সাড়া পেয়ে শাওমির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও লেই জুন আবেগে বলেন,
“আমরা হয়তো চীনের অটোমোবাইল শিল্পে এক নতুন অধ্যায়ের জন্ম দেখছি।”
এই একটি লাইন থেকেই বোঝা যায়, শাওমি ঠিক কতটা আত্মবিশ্বাসী তাদের নতুন যাত্রা নিয়ে।
গাড়িটির দাম ও ফিচার
Xiaomi SU7 মডেলটি মূলত পাঁচ সিটের একটি ইলেকট্রিক গাড়ি। এর প্রারম্ভিক মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ ইউয়ান, যা বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ৫ লাখ টাকার একটু বেশি, আর মার্কিন ডলারে প্রায় ৩৫ হাজার ডলার।
গাড়িটিতে আছে আধুনিক ডিজাইন, উন্নত প্রযুক্তি ও শক্তিশালী ইন্টেলিজেন্ট ড্রাইভিং সিস্টেম। মানে, এটি এমন এক ধরনের স্মার্ট গাড়ি, যা চালককে বিভিন্নভাবে সহায়তা করবে যেমন রাস্তা চিনে নেওয়া, গতি নিয়ন্ত্রণ, বাধা শনাক্ত করা ইত্যাদি।
শাওমির অন্যান্য প্রোডাক্টের মতো এই গাড়িটিও ইউজার-ফ্রেন্ডলি। এতে রয়েছে টাচ স্ক্রিন, ভয়েস কমান্ড সাপোর্ট এবং স্মার্টফোনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের সুবিধা। অনেকেই বলছেন, এটি যেন মোবাইল আর গাড়ির এক চমৎকার মিশেল!
শেয়ারের দামে বড় উল্লম্ফন
গাড়িটির বিপুল চাহিদা দেখে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে শাওমির শেয়ারের দাম প্রায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে দাম কিছুটা কমেছে, কিন্তু তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি কারণ শাওমির বাজারমূল্য এখন পর্যন্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ জায়গায় রয়েছে।
এই অগ্রগতির মাধ্যমে শাওমি(Xiaomi) প্রমাণ করলো, তারা শুধু মোবাইল বা গ্যাজেটেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না তারা ভবিষ্যতের যানবাহন শিল্পেও নিজেদের জায়গা তৈরি করতে চায়।
তবে চিন্তার কারণও আছে
শাওমি SU7 নিয়ে যেমন আগ্রহ রয়েছে, তেমনি একটি দুঃখজনক ঘটনা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। মার্চ মাসে এই গাড়ির একটি দুর্ঘটনায় ৩ শিক্ষার্থী নিহত হন। জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি ছিল অ্যাসিস্টেড ড্রাইভিং মোডে অর্থাৎ গাড়ি চালাতে চালককে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছিল সিস্টেমটি।
এই ঘটনার পর থেকেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বুদ্ধিমান ড্রাইভিং প্রযুক্তি আদৌ কতটা নিরাপদ? শাওমি অবশ্য জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং ভবিষ্যতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।
বাজারে প্রতিযোগিতা কড়া
শাওমির জন্য এই নতুন গাড়ির বাজার মোটেই সহজ নয়। চীনে এরই মধ্যে শক্তিশালী অনেক ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা রয়েছে, যেমন:
BYD
NIO
Huawei Aito
Li Auto
এছাড়াও আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তো Tesla নামটা আছেই। এই প্রতিযোগীদের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হলেও, শাওমির আছে বিশাল ফ্যানবেস ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা, যেটা তাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।
শাওমির লক্ষ্য কী?
শাওমি (Xiaomi)বলছে, তারা শুধু একটা গাড়ি বানাতে চায় না, বরং তারা চায় একটি “ফুল-স্ট্যাক EV ব্র্যান্ড” গড়ে তুলতে। এর মানে তারা চায় নিজেরাই গাড়ির সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, প্রযুক্তি সব কিছু তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করতে। এটা করলে ব্যবহারকারীরা আরও স্মার্ট ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা পাবেন।
শাওমি(Xiaomi) চায় তাদের ইকোসিস্টেমের মধ্যে গাড়িটিও যুক্ত হোক, যেন একজন শাওমি ব্যবহারকারী ফোন, টিভি, স্মার্টওয়াচের পাশাপাশি গাড়িও একই অ্যাপে ব্যবহার করতে পারেন।
সরকারি সহযোগিতাও পাচ্ছে
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক ফোরামে বলেছেন, তারা চায় চীন “বিশ্বের প্রধান ভোক্তা শক্তি” হোক। আর সেই লক্ষ্যেই ইলেকট্রিক গাড়ির মতো খাতে সরকার নীতিগতভাবে সাহায্য করছে। এর মানে, শাওমির মতো কোম্পানি ভবিষ্যতে আরও সহায়তা পাবে।
শেষ কথা
শাওমির এই SUV প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চাইলে নতুন খাতে গিয়েও বিপ্লব ঘটাতে পারে। মাত্র এক ঘণ্টায় ৩ লাখ প্রি-অর্ডার পাওয়ার মতো ঘটনা খুব বেশি দেখা যায় না।
এখন দেখার বিষয় হলো শাওমি কি এই শুরুটা ধরে রাখতে পারবে? তারা কি নিরাপত্তা ও পারফরম্যান্সে প্রতিযোগীদের টেক্কা দিতে পারবে?
সময়ের অপেক্ষা ,তবে এতটুকু নিশ্চিত, শাওমি এই নতুন দুনিয়ায় প্রবেশ করে সবাইকে চমকে দিয়েছে।