বর্তমানে আমরা ৫জি নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করেছি। বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ ইতিমধ্যেই এই অত্যাধুনিক নেটওয়ার্ক চালু করেছে, আবার অনেক দেশ এখনো তাদের অঞ্চলে ৫জি বিস্তৃত করার কাজ করছে। যদিও ৫জি এখনো অনেক জায়গায় পুরোপুরি চালু হয়নি, তারই মধ্যে বিশ্বের প্রযুক্তি নেতা দেশগুলো নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্ক, অর্থাৎ ৬জি(6G) প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে।
৬জি(6G) প্রযুক্তি কী? কেন এর জন্য এত আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে? চলুন, ধাপে ধাপে বুঝে নেওয়া যাক।
৫জি থেকে ৬জি(6G) প্রযুক্তি যাত্রা:
৫জি নেটওয়ার্ক আমাদের জীবনে আসার পর অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট স্পিড অনেক বেড়েছে, যার ফলে ভিডিও দেখা, অনলাইন গেম খেলা, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করা অনেক সহজ হয়েছে। আরও বড় ব্যাপার হলো, ৫জি অনেক বেশি ডিভাইসকে একসঙ্গে দ্রুত কানেক্ট করতে পারে, যা স্মার্ট সিটি, স্বয়ংচালিত গাড়ি এবং স্মার্ট হোমের মতো ধারণাগুলোর বাস্তবায়নে সাহায্য করছে।
তবে প্রযুক্তির বিশ্বে থামার কোনো জায়গা নেই। তাই এখন ৫জির বিকল্প বা পরবর্তী ধাপ হিসেবে ৬জি নিয়ে ভাবা শুরু হয়েছে। ৬জি হবে এমন এক নেটওয়ার্ক, যা ৫জির থেকেও অনেক গুণ বেশি দ্রুত ও দক্ষ হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা:
দক্ষিণ কোরিয়া, যাকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বনেতা হিসেবে ধরা হয়, তারা আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ৬জি চালু করার পরিকল্পনা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী লিম হাইসুক বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এই ঘোষণা দেন।
When is 6G coming?(৬ জি কবে আসবে)?:
মন্ত্রী জানান, আগামী ২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ৬জি প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের জন্য উপলব্ধ করব। এটি হবে এমন এক নেটওয়ার্ক, যার গতিবেগ ৫জির থেকে অন্তত ৫০ গুণ বেশি হবে। এর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা খুব দ্রুত ডাউনলোড, আপলোড, এবং যেকোনো ধরণের ডেটা আদান-প্রদান করতে পারবে।
৬জি প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও গুরুত্ব:
৬জি আসলে কেবল দ্রুত ইন্টারনেট নয়, এটি প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। উদাহরণস্বরূপ:
অত্যন্ত দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার: এখন যেখানে ৫জি ইন্টারনেটের স্পিড প্রায় ১ গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, ৬জি হতে পারে ১০ গিগাবিট থেকে ৫০ গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত। এর মানে, মুহূর্তের মধ্যে একটি ফুল-এইচডি ছবি বা ভিডিও ডাউনলোড করা যাবে।
নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন: ৬জি সাহায্যে স্বয়ংচালিত গাড়ির প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে, যেখানে গাড়িগুলো নিজেদের মধ্যে আরও দ্রুত তথ্য বিনিময় করবে। মেডিকেল সেক্টরে রিমোট সার্জারি সম্ভব হবে, যেখানে চিকিৎসক দূর থেকে রোগীর অপারেশন করতে পারবেন।
আধুনিক শহর ও স্মার্ট সিটি: শহরগুলোর সমস্ত যানবাহন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ও পানির সরবরাহ ৬জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে শহরগুলো হবে আরও স্মার্ট, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব।
বিস্তৃত কানেক্টিভিটি: ৬জি প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও দ্রুত ও স্থিতিশীল ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব হবে।
চীনের ৬জি পরীক্ষা-নিরীক্ষা:
চীন, বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি শক্তি, তারা ইতোমধ্যে ৬জি প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। যদিও এখনও তারা বাণিজ্যিকভাবে ৬জি চালু করেনি, কিন্তু গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
৬জি নিয়ে চীনের আগ্রহের কারণ হলো তারা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব রাখতে চায়। ৬জি সফল হলে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ইন্টারনেট সেবা তাদের হাতেই থাকবে। তাই তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে যাতে এই প্রযুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।
৬জি কবে নাগাদ আমাদের কাছে আসবে?:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ৬জি প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে আনুমানিক ২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হবে। তবে এর আগে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক কাজ ও সীমিত এলাকাতে প্রয়োগ চালানো হবে।
এখনকার মতো ৫জি নেটওয়ার্ক পুরোপুরি স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত ৬জি সবার কাছে পৌঁছানো কঠিন। তবে ধাপে ধাপে নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে ৬জি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
সাধারণ মানুষের জীবনে ৬জির প্রভাব:
৬জি চালু হলে আমরা অনেক বেশি স্মার্ট, দ্রুত এবং সংযুক্ত হয়ে যাবো। অনলাইন ক্লাস, অফিসের কাজ, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা সবকিছুই আরো উন্নত ও সহজ হয়ে উঠবে।
বিশেষ করে, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) ব্যবহার করে শিক্ষাদান এবং চিকিৎসার নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। ৬জির মাধ্যমে এই প্রযুক্তিগুলো এমনভাবে কাজ করবে, যা এখন কল্পনাও করা যায় না।
বিশ্ব প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে। ৫জি এখনো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি, ঠিক তখনই ৬জি নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ অনেক দেশ ৬জিকে ভবিষ্যতের অন্যতম বড় প্রযুক্তি হিসেবে দেখছে।
৬জি প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করবে আরও স্মার্ট, আরও সহজ এবং আরও দ্রুত। আমরা হয়তো খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না, এই নতুন ইন্টারনেট যুগে প্রবেশ করতে।
তাই সবাইকে প্রযুক্তির এ নতুন দিগন্ত সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং প্রস্তুত থাকতে হবে আগামীর চমকপ্রদ পরিবর্তনের জন্য।
1 Comment
Pingback: Instagram(ইনস্টাগ্রাম) এখন স্ক্রল না করেই রিলস!!! - techajkal.com