অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর সেই ভালো খবর! স্যাটেলাইট ভিত্তিক দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক(Starlink), আর সেটা এখন বাংলাদেশেও চালু হয়ে গেলো! বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে যারা ভালো ইন্টারনেট পেতেন না, তাদের জন্য এটা যেন এক স্বপ্ন পূরণের মতো।স্টারলিংক(Starlink) তারবিহীন এক স্বপ্নের নাম ,অনেকেই আশার আলো দেখছেন।জেনে রাখা ভালো,স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা(Starlink Owner) হলেন ইলন মাস্ক(Elon Musk)।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ আহমাদ তাইয়েব ফেসবুকে জানান, স্টারলিংকের এক প্রতিনিধি তাকে ফোন করে নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা শুরু করেছে। স্টারলিংকও তাদের অফিসিয়াল এক্স (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলে এ সুখবরটি শেয়ার করেছে।
কোন কোন প্যাকেজ এবং খরচ কত?
স্টারলিংক মূলত ২ ধরনের প্যাকেজ নিয়ে এসেছে, যা মানুষের চাহিদা ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী:
Starlink Residence: মাসে ৬,০০০ টাকা
Residence Lite: মাসে ৪,২০০ টাকা
এর পাশাপাশি প্রথমে একবার ৪৭,০০০ টাকা দিয়ে সেটআপের যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। এর মধ্যে থাকবে স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। একবার সেটআপ হয়ে গেলে পরে শুধু মাসিক ফি দিতে হবে।
স্পিড আর ডেটায় কোনো সীমা নেই!
সবচেয়ে ভালো খবর হলো, এখানে ডেটা বা স্পিডে কোনো বেধে দেওয়া নেই! আপনি যত খুশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন, সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস গতিতে।
যারা ফ্রিল্যান্সার, ভিডিও এডিটর, অনলাইন শিক্ষার্থী বা গেমার, তাদের জন্য এটা এক দারুণ সুযোগ।শুধু তাই নয়,এই ঘোষণায় প্রযুক্তিপ্রেমিদের মনে যেমন আগ্রহ জাগিয়েছে তেমনি সাধারণ মানুষকেও আশার আলো দেখিয়েছে।বাংলাদেশে এমন অনেক প্রত্যন্ত এলাকা আছে যেখানে অনেক মানুষ ভালোভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না,ফলে তারা প্রযুক্তি থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।আর এখানেই স্টারলিংক স্বপ্ন দেখাবে।
সেবা কবে ও কোথায় পাওয়া যাবে?
আজ থেকেই স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার দেওয়া যাবে। শুরুতে শহর ও আশেপাশের এলাকায় সেবা চালু হলেও ধীরে ধীরে গ্রাম-গঞ্জ, পাহাড়ি ও দূরবর্তী এলাকায় পৌঁছে যাবে।
যারা অনেকদিন ধরে গ্রামীণ এলাকায় ভালো ইন্টারনেটের অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের জন্য এটি অনেক বড় সুখবর।
সরকারের সহায়তা ও দ্রুত বাস্তবায়ন
এই সেবা চালু করার পেছনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের দৃঢ় নেতৃত্ব ও সরকারের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, যা বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতির জন্য বড় এক সাফল্য।
সেবা কার জন্য উপযোগী?
এই সেবা মূলত তাদের জন্য যারা অনলাইনে কাজ করেন যেমন ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা, এনজিও কর্মী, দূর থেকে অফিস করেন এমন সবাই। যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল, সেখানে এটি হবে নির্ভরযোগ্য হাইস্পিড ইন্টারনেটের একমাত্র উপায়।
স্থানীয় ইন্টারনেট ব্যবসায় নতুন সুযোগ
স্টারলিংকের আগমন মানেই স্থানীয় ISP বা ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা পিছিয়ে পড়বে না। বরং তারা এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন অঞ্চলে গ্রাহক বাড়ানোর সুযোগ পাবে। এতে ব্যবসার নতুন দিগন্ত খুলবে।
বিশ্বের দরবারে স্টারলিংক(Starlink):
স্টারলিংক আসলে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের একটি প্রকল্প, যা বিশ্বজুড়ে দূরবর্তী ও দুর্লভ অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে দিচ্ছে। আফ্রিকার গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র পর্যন্ত এই সেবা চলে এসেছে।
বাংলাদেশে এর আগমন দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বড় প্রাপ্তি।এই বাংলাদেশ যেন এক নতুন স্বপ্নময় বাংলাদেশ।
স্টারলিংকের বাংলাদেশ যাত্রা শুধু নতুন একটি ইন্টারনেট সেবা নয়, বরং দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য এক আশার আলো। খরচ কিছুটা বেশি হলেও, নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও উচ্চমানের ইন্টারনেটের জন্য এটি হতে পারে সেরা পছন্দ।ফলে শহর থেকে গ্রাম অবধি আধুনিক প্রযুক্তি সাধারন মানুষের কাছে পৌছে যাবে।স্টারলিংক, ইলন মাস্কের সেই বিখ্যাত প্রকল্প, যা পৃথিবীর কোণায় কোণায় ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার মিশনে নেমেছে। দারিদ্র্য-পীড়িত গ্রাম থেকে শুরু করে বরফে ঢাকা গ্রীনল্যান্ড স্টারলিংক পৌঁছেছে অনেক জায়গায়। আর এবার এসে পড়েছে আমাদের বাংলাদেশেও।
সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তির আগমন আর জনগণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিলিয়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল উন্নয়নের গতি এখন অনেক বেশি যা ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল দেশের রোলমডেল