বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে নতুন কোনো ব্র্যান্ড এলে তরুণরা কৌতূহল নিয়ে তা দেখে। কয়েক বছর আগে এমন একটি নাম আলোচনায় আসে—নাথিং ফোন। নাম শুনে অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো ফোনটিতে বিশেষ কিছু নেই। কিন্তু বাজারে আসার পর দেখা গেল, এই ফোন সত্যিই আলাদা।
ব্র্যান্ডের শুরু
চীনের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ওয়ানপ্লাসের সহপ্রতিষ্ঠাতা কার্ল পেই ২০২২ সালে নাথিং ফোন বাজারে আনেন। প্রথম ফোনটির নাম ছিল নাথিং ফোন ওয়ান। ফোনটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল এর ডিজাইন। পেছনের অংশ স্বচ্ছ হওয়ায় ভেতরের অংশ দেখা যায়। সঙ্গে ছিল বিশেষ “গ্লিফ লাইট” ব্যবস্থা। ফোনে কল আসা, চার্জ দেওয়া বা নোটিফিকেশনের সময় এই লাইট জ্বলে ওঠে। ফলে ফোনটি অন্য সব ফোন থেকে আলাদা হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে ফোনটি পাওয়া যায় কিভাবে
বাংলাদেশে নাথিং ফোনের কোনো অফিসিয়াল শোরুম বা পরিবেশক নেই। তাই সাধারণত বিদেশ থেকে আনা ফোনই এখানে বিক্রি হয়। এ কারণে দোকানভেদে দাম ভিন্ন হতে পারে। আবার অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি না থাকলেও অনেক দোকান নিজেদের সার্ভিস ওয়ারেন্টি দেয়।
দাম কত?
বাজারে এখন নাথিং ফোনের বিভিন্ন মডেল পাওয়া যাচ্ছে। যেমন
নাথিং ফোন থ্রি: প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা
নাথিং ফোন থ্রিএ: প্রায় ৩৩,৫০০ টাকা
নাথিং ফোন থ্রিএ প্রো ৫জি: প্রায় ৩৮,৯০০ টাকা
নাথিং ফোন থ্রি ৫জি: প্রায় ৭২,০০০ টাকা
সিএমএফ বাই নাথিং ফোন ওয়ান: প্রায় ২৪,৫০০ টাকা
সিএমএফ বাই নাথিং ফোন টু প্রো: প্রায় ২৬,২০০ টাকা
তবে দাম সব সময় এক থাকে না। দোকান, এলাকা ও অফারের ওপর নির্ভর করে দাম কমবেশি হতে পারে।
ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা
রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম সম্প্রতি বসুন্ধরা সিটি থেকে নাথিং ফোনের সিএমএফ টু প্রো মডেল কিনেছেন। ৮ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজের এই ফোনটি তিনি কিনেছেন ২৮,৬০০ টাকায়। রাকিবুল বলেন, “এই দামে অন্য ফোনগুলোর তুলনায় নাথিং ফোন আমাকে ভালোই লেগেছে। তবে যদি চার্জিং স্পিড ৩৩ ওয়াটের বদলে ৪৫ ওয়াট হতো, তাহলে আরও ভালো হতো।”
বিক্রেতারাও বলছেন, এখন তরুণদের কাছে নাথিং ফোন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বসুন্ধরা সিটির একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী আবু সুফিয়ান জানান, “আগে দাম বেশি থাকায় অনেকেই কিনতে চাইতেন না। এখন দাম কিছুটা কমেছে। তাই প্রতিদিনই আমরা গড়ে ১০টির মতো নাথিং ফোন বিক্রি করি।”
কেন তরুণদের কাছে জনপ্রিয়?
ফোনটির জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ এর ডিজাইন। স্বচ্ছ ব্যাক কভার, গ্লিফ লাইটিং আর স্টাইলিশ লুক তরুণদের কাছে এটিকে ভিন্ন করে তুলেছে। শুধু তাই নয়, ক্যামেরা ও সফটওয়্যারও ভালো মানের।
ফোনটিতে সাধারণত ৫,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি থাকে, যা দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যায়। আবার ৫০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং থাকায় দ্রুত চার্জ হয়। ফলে ব্যাটারি নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করতে হয় না।
বসুন্ধরা মলের আরেক বিক্রেতা আশিকুর রহমান বলেন, “নাথিং ফোনের সফটওয়্যার খুব শক্তিশালী। কোনো সমস্যা হলে দ্রুত আপডেট পাওয়া যায়। অনেকেই শুধু ডিজাইন আর সফটওয়্যার অভিজ্ঞতার জন্য ফোনটি কিনছেন।” তাঁর মতে, প্রতিদিন গড়ে ৫–৬টি নাথিং ফোন বিক্রি হয়।
তরুণদের আকর্ষণ
তরুণরা সব সময় নতুন কিছু খোঁজেন। নাথিং ফোন তাঁদের সেই আগ্রহ পূরণ করছে। এটি শুধু ফোন নয়, বরং স্টাইলেরও অংশ হয়ে উঠছে। যারা অন্যরকম কিছু ব্যবহার করতে চান, তাদের কাছে নাথিং ফোন বেশ প্রিয় হয়ে উঠছে।
সব মিলিয়ে, নাথিং ফোন এখন একটি স্টাইলিশ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। দাম তুলনামূলক বেশি হলেও এর ব্যতিক্রমী ডিজাইন, আলো ঝলমলে ব্যাক লাইট, ভালো ব্যাটারি ও ক্যামেরা তরুণদের আকর্ষণ করছে। অফিসিয়াল পরিবেশক না থাকায় কিছু ঝুঁকি থাকলেও, ভিন্ন কিছু ব্যবহার করতে চাওয়াদের কাছে এই ফোন এখন বেশ জনপ্রিয়।