একটি ব্যস্ত দিন,সবাই যে যার মত অফিস কিংবা স্কুলে অথবা অন্য কোন কাজে যাচ্ছে। তখন হঠাৎ একটি পারমানবিক বোমা (Nuclear Bomb)ফেলা হল।ভাবতে পারেন কি হবে তখন?
বলাই বাহুল্য ব্যস্ত শহরের কোলাহল নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।বলা হয়ে থাকে পারমাণবিক বোমার (Nuclear Bomb)আঘাতে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই ভস্মীভূত হয়ে যায় সবকিছু। ধরা যাক আপনি বিস্ফোরণস্থল থেকে দূরে আছেন,কিন্তু তাতেও কি আপনি বেচে যাবেন?
পারমাণবিক বোমার(Nuclear Bomb) প্রধান উপাদান হলো তেজস্ক্রিয় (Radioactive) পদার্থ, যেগুলোর নিউক্লিয়াস (nucleus) ভেঙে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে। এই শক্তিই বিস্ফোরণের মূল উৎস।বিস্ফোরণের সময় এই শক্তিগুলো আশেপাশে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।
🔬 প্রধান উপাদান দুটি:
1. ইউরেনিয়াম-২৩৫ (Uranium-235)
এটি একটি প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া তেজস্ক্রিয় ধাতু।
প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামে U-235 এর পরিমাণ কম (প্রায় ০.৭%) – তাই এটিকে সমৃদ্ধ (enriched) করতে হয়।
নিউট্রনের সাথে সংঘর্ষে এটি বিভক্ত (fission) হয়ে শক্তি ছাড়ে।
2. প্লুটোনিয়াম-২৩৯ (Plutonium-239)
এটি একটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা তেজস্ক্রিয় পদার্থ।
এটি ইউরেনিয়াম-২৩৮ থেকে তৈরি হয় নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরে।
এটি ইউরেনিয়ামের চেয়ে কম পরিমাণে ব্যবহার করেই অধিক শক্তি দেয়।
১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথা আমরা কম বেশি সবাই শুনেছি বা জেনেছি। ওই সময় প্রায় ২ লক্ষ্য মানুষ মারা গিয়েছিল,পংগু হয়েছিল আরো অনেক মানুষ।
যুগ বদলেছে, প্রযুক্তির উন্নয়ন দ্রুত গতিতে বাড়ছে,সেই সাথে বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুকি।বিশ্বে বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ ১৩ হাজারের বেশি।আধুনিক পারমাণবিক বোমার কার্যক্ষমতা অনেক বেশি।বর্তমানে ১ গিগাটনের চেয়েও বড় বোমা তৈরি হচ্ছে।
ঢাকার ফার্মগেটে একটি পারমাণবিক বোমা (nuclear bomb) ফেলা হলে তার প্রভাব হবে ভয়াবহ এবং ব্যাপক ধ্বংসাত্মক। নিচে এর ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ দিচ্ছি, যদি একটি মাঝারি ক্ষমতার (১৫ কিলোটন, যেমন হিরোশিমার সমান) পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়:
– ধ্বংসের স্তরভিত্তিক বিশ্লেষণ
🔥 ১. প্রাথমিক বিস্ফোরণ (Ground Zero – ১ কিমি ব্যাসার্ধ)
সম্পূর্ণ ধ্বংস: ফার্মগেট এলাকা এবং আশপাশ (কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও, তেজগাঁও) সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিল্ডিং, ব্রিজ, বাস, মানুষ – সবকিছু এক সেকেন্ডেই ধ্বংস।
তাপমাত্রা হবে ৩০০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো – মানুষ মুহূর্তেই পুড়ে যাবে।
🌪 ২. শক ওয়েভ (১–৩ কিমি ব্যাসার্ধ)
বাড়িঘর ও কাঁচের জানালা উড়ে যাবে।
মারাত্মক আহত বা অগ্নিদগ্ধ মানুষ।
কিছু বিল্ডিং ধসে পড়বে।
🔥 ৩. তাপতরঙ্গ ও আগুন (৩–৬ কিমি পর্যন্ত)
শরীরের চামড়া পুড়ে যাবে (third-degree burn)।
দগ্ধ মানুষদের সংখ্যা হাজার ছাড়াবে।
বড় অগ্নিকাণ্ড দেখা দিতে পারে।
🌫 ৪. তেজস্ক্রিয়তা বা Radiation Fallout (১০–৫০ কিমি পর্যন্ত)
বোমা ফাটার পর তৈরি হবে “ফলআউট ক্লাউড” (radioactive ash)।
বাতাসে ছড়িয়ে পড়া রেডিওএকটিভ কণা বাতাস ও বৃষ্টির সাথে ছড়িয়ে পড়বে।
ক্যানসার, আন্তরিক অঙ্গ বিকল, জন্মগত ত্রুটি, ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা।
🚑 ৫. মানবিক বিপর্যয়
তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে ৫০,০০০–১,০০,০০০ জনের (জনঘনত্বের উপর নির্ভর করে)।
আহত বা তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত লক্ষাধিক।
হাসপাতাল, জরুরি সেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
🧬 দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
তেজস্ক্রিয় ধুলা মাটি, পানি ও খাদ্যে মিশে যাবে।এছাড়াও জলবায়ু যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং মাটি তার স্বকীয়তা হারাবে,ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে।পশু পাখির বসবাস তথা বাস্তুসংস্থান এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। খাদ্য ও পানির ব্যাপক চাহিদা এবং অভাব দেখা দেবে যা মানবজাতির জন্য হুমকি।এছাড়াও বছরের পর বছর ধরে এলাকা বসবাসের অযোগ্য থাকবে।ভবিষ্যৎ প্রজন্মে জিনগত পরিবর্তন ও ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
পারমাণবিক বিস্ফোরণে গামা রে ও নিউট্রন রে নির্গত হয়।পারমানবিক বোমা(Nuclear Bomb) শুধু একটি এলাকার মানুষের নয়, পুরো পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি। যুদ্ধ বা প্রতিশোধের মাধ্যমে এর ব্যবহার মানবসভ্যতার বড় ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
পারমাণবিক বোমা(Nuclear Bomb) ফার্মগেটের মতো জনবহুল এলাকায় ফেলা হলে এর ফলে কেবল ঢাকা নয়, পুরো বাংলাদেশের রাজনৈতিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। এটি শুধু একটি শহরের নয়, একটি জাতির অস্তিত্বের উপর আঘাত।