Open AI:
(Open AI)জেনারেটিভ এআই—যেমন ChatGPT, Microsoft Copilot বা Google Gemini—এখন অনেক কাজই সহজ করে দিচ্ছে। লেখালেখি, অনুবাদ, প্রশ্নের উত্তর, এমনকি কাস্টমার সার্ভিস—এসব কাজ আগে যেখানে একজন মানুষ করতেন, এখন তার অনেক কিছুই এআই করতে পারছে।
এই কারণে অনেকেই ভাবছেন, ভবিষ্যতে হয়তো অনেক চাকরি চলে যাবে। আবার কেউ বলছেন, এআই আমাদের সহায়ক হবে, কাজ আরও সহজ হবে। তাহলে আসলে কী হতে যাচ্ছে?
সম্প্রতি মাইক্রোসফট একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা দেখিয়েছে কোন কোন পেশায় এআই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। চলুন খুব সহজভাবে জেনে নেওয়া যাক কী বলছে সেই রিপোর্ট।
গবেষণার মূল তথ্য:
এই গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রে করা হয়েছে, যেখানে মাইক্রোসফটের ‘Copilot’ নামের চ্যাটবট ব্যবহার করেছেন এমন ২ লাখের বেশি ব্যবহারকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসব চাকরি লেখালেখি, অনুবাদ, তথ্য বিশ্লেষণ বা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ওপর নির্ভর করে—সেইসব কাজেই এআই-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে। কারণ, এই কাজগুলো খুব রুটিন এবং পুনরাবৃত্তিমূলক। অর্থাৎ, একই ধরনের কাজ বারবার করতে হয়। আর এই ধরনের কাজ এআই খুব সহজেই করে ফেলছে।
কোন কোন পেশা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?
মাইক্রোসফট প্রতিটি পেশার জন্য ০ থেকে ১ এর মধ্যে একটি স্কোর দিয়েছে—যার মান যত বেশি, সেই পেশা তত বেশি ঝুঁকিতে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পেশাগুলো হলো:
অনুবাদক ও দোভাষী (স্কোর: ০.৪৯)
ইতিহাসবিদ (০.৪৮)
যাত্রী সহকারী (প্যাসেঞ্জার অ্যাটেনড্যান্ট) (০.৪৭)
পরিষেবা বিক্রয় প্রতিনিধি (০.৪৬)
লেখক ও সম্পাদক (০.৪৫)
কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ (০.৪৪)
টেলিফোন অপারেটর ও CNC প্রোগ্রামার (০.৪২)
এই তালিকায় আরও অনেক পেশার নাম রয়েছে, যেমন:
টেলিমার্কেটার, টিকিট এজেন্ট, রেডিও উপস্থাপক, সংবাদ বিশ্লেষক, রাজনৈতিক গবেষক, জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ এবং ডেটা সায়েন্টিস্ট।
এই পেশাগুলোর মধ্যে অনেকেই এখন ভয় পাচ্ছেন যে হয়তো একদিন তাদের চাকরি থাকবে না।
কেন এই পেশাগুলো বেশি ঝুঁকিতে?
এই পেশাগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে একঘেয়ে বা নিয়মিত কিছু কাজ করতে হয়—যেমন প্রশ্নের উত্তর, রিপোর্ট লেখা, তথ্য বোঝানো, ফোনে কথা বলা, ইমেইলের উত্তর দেওয়া ইত্যাদি।
এআই এখন এসব কাজ খুব কম সময়ে এবং অনেক দ্রুততার সঙ্গে করতে পারছে। তাই কাজের গতি বাড়ছে, কিন্তু একই সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনও কিছু ক্ষেত্রে কমে যাচ্ছে।
তবে এর মানে এই নয় যে চাকরিগুলো একেবারে চলে যাবে।
চাকরি যাবে না, তবে বদলাবে
মাইক্রোসফটের রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে—চাকরি পুরোপুরি চলে যাবে এমন নয়, তবে কাজের ধরনে বড় পরিবর্তন আসবে। অর্থাৎ, আগে যেভাবে কেউ অনুবাদ করতেন বা কল সেন্টারে কাজ করতেন, এখন তাকে একটু অন্যভাবে কাজ করতে হবে।
এআই অনেকটা সহকারী হিসেবে কাজ করবে—আপনি যেটা শুরু করবেন, সেটা শেষ করবে। বা আপনি যেটা খসড়া আকারে করবেন, সেটাকে আরও সাজিয়ে-গুছিয়ে দেবে।
তাই এখন যারা এসব পেশায় আছেন, তাদের দরকার নতুন স্কিল শেখা এবং এআই-এর সঙ্গে কাজ করার কৌশল রপ্ত করা।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই থেকে পালিয়ে বাঁচার উপায় নেই। বরং সেটিকে বুঝে কাজে লাগাতে পারলেই আপনি এগিয়ে থাকবেন।
লেখক, অনুবাদক, সাংবাদিক, এমনকি কল সেন্টার কর্মীরাও যদি এআই-এর সাহায্যে কাজ করতে শিখেন, তাহলে তারাই হবেন আগামী দিনের সফল পেশাজীবী।
ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কিন্তু বদলানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
কীভাবে প্রস্তুত হবেন?
নতুন স্কিল শিখুন: যেমন, কন্টেন্ট এডিটিং, এআই টুল ব্যবহার করা, কাস্টমার এনালিটিকস বোঝা ইত্যাদি।
এআই-কে সহকারী হিসেবে দেখুন: নিজের কাজ সহজ করতে ব্যবহার করুন।
ট্রেনিং নিন: অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন এআই নিয়ে কোর্স আছে।
নিজেকে সময়ের সঙ্গে আপডেট রাখুন: প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন, জানতে চেষ্টা করুন।
জেনারেটিভ এআই এখন শুধু ভবিষ্যতের গল্প নয়, এটি বর্তমানে আমাদের কাজের অংশ হয়ে গেছে। কিছু চাকরির ধরন বদলে যাবে, কিছু কাজ আর আগের মতো থাকবে না। কিন্তু ভয় নয়, প্রস্তুতি ও অভিযোজনই হচ্ছে মূল চাবিকাঠি।
আপনি যদি Open AI কে ভয় না পেয়ে বন্ধু বানাতে পারেন, তাহলে কাজের জগতে আপনি অনেকদূর এগিয়ে যাবেন।