বলাই বাহুল্য আমাদের প্রতিদিনের জীবনে তথ্য খোঁজা এখন আর আগের মতো নেই। কিছু জানার দরকার হলে একসময় সবাই চোখ বন্ধ করে গুগলে ছুটে যেত। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(Chatgpt) বা এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে অনলাইনে তথ্য অনুসন্ধানের ধরনেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। বিশেষ করে এআই চ্যাটবট, যেমন ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি(Chatgpt), মানুষের তথ্য খোঁজার পদ্ধতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
চ্যাটজিপিটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ চ্যাটবট নয় এটি এখন মানুষের প্রতিদিনকার ডিজিটাল সহকারী হয়ে উঠেছে। ওপেনএআই সম্প্রতি যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা সত্যিই চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রতিদিন চ্যাটজিপিটির(Chatgpt) ব্যবহারকারীরা গড়ে ২৫০ কোটিরও বেশি বার কোনো না কোনো তথ্য জানার অনুরোধ করছেন বা যাকে বলা হয় “প্রম্পট”। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেও এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ কোটির মতো। এ থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি, কত দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই এআই প্রযুক্তি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ব্যবহারের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, চ্যাটজিপিটি (Chatgpt) সহজ ব্যবহারযোগ্যতা মানুষকে আকৃষ্ট করছে। দ্বিতীয়ত, এর বহুমুখী সুবিধা তথ্য অনুসন্ধান, লেখালেখি, কোডিং, অনুবাদ, এমনকি পরামর্শ নেওয়ার কাজেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। আর তৃতীয়ত, ওপেনএআই নিয়মিতভাবে চ্যাটজিপিটি(Chatgpt) আপডেট ও উন্নত করছে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে করে তুলছে আরও স্বচ্ছন্দ ও কার্যকর।
ওপেনএআই জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটি(Chatgpt) ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রম্পট আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে—প্রতিদিন প্রায় ৩৩ কোটি বার। বাকি অনুরোধগুলো আসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। এটি প্রমাণ করে, চ্যাটজিপিটির ব্যবহার এখন আর কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি একটি বিশ্বজনীন প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
তবে এমন নয় যে গুগলের গুরুত্ব কমে গেছে। বরং এখনও অনলাইন অনুসন্ধানের দুনিয়ায় গুগলই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। গুগলের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতিদিন গুগলে প্রায় ১৫০০ কোটি বার তথ্য অনুসন্ধান করা হয়। সংখ্যাটি বিশাল, এবং চ্যাটজিপিটি(Chatgpt) তুলনায় অনেকটাই বেশি। ওপেনএআই-ও এই ব্যবধান স্বীকার করছে। কিন্তু তারা এটাও বলছে যে, প্রযুক্তির গতিপথ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে এআই-নির্ভর অনুসন্ধান আরও বেশি জায়গা করে নেবে এবং এটা আমরা নিজেরাও অনুধাবন করতে পারছি।
এই পরিবর্তনের গতি উপলব্ধি করে গুগলও এখন নিজেদের সেবা নতুনভাবে সাজাতে শুরু করেছে। তারা তাদের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মডেল ‘জেমিনি’ গুগল সার্চে যুক্ত করেছে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা এখন ‘এআই মোড’-এর মাধ্যমে সার্চ করলে সরাসরি এআই দ্বারা তৈরি ফলাফল দেখতে পাবেন। শুধু তাই নয়, গুগলের অন্যান্য সেবাগুলোতেও, যেমন ডিসকভার, গুগল নিউজ কিংবা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট—সবখানেই ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে ওপেনএআই বসে নেই। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ‘চ্যাটজিপিটি এজেন্ট’ নামে নতুন একটি সুবিধা চালু করেছে, যা একধরনের উন্নত এআই সহকারী। এই এজেন্ট ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে সরাসরি কাজ করতে পারে যেমন ফাইল খোঁজা, রিপোর্ট লেখা, ইমেইল তৈরি, তথ্য বিশ্লেষণ, এমনকি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নথিপত্র সাজিয়ে দেওয়া পর্যন্ত। এক কথায়, এটি কেবল প্রশ্নোত্তরের বট নয়, বরং একজন ডিজিটাল সহকারী।
ওপেনএআই দাবি করেছে, তাদের এআই এজেন্ট অন্যান্য এআই টুলের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুত। কারণ, এটি একটি বৃহৎ ও আপডেটেড ডেটাসেট ব্যবহার করে এবং এর বিশ্লেষণ ক্ষমতা অনেক উন্নত। ফলে ব্যবহারকারীরা শুধু তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না, বরং জটিল সমস্যার সমাধান, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ, এমনকি দৈনন্দিন কাজের সংগঠনে সহায়তা পাচ্ছেন।
এই পুরো প্রেক্ষাপটটি প্রযুক্তির একটি বড় রূপান্তরের দিক নির্দেশ করে। আগে যেখানে আমরা শুধুমাত্র কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করতাম, এখন আমরা প্রকৃতপক্ষে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কথোপকথন করে তথ্য জানছি, শেখাচ্ছি, এমনকি পরামর্শও নিচ্ছি। এটি একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ এবং পার্সোনালাইজড অভিজ্ঞতা, যা আগের যেকোনো সার্চ ইঞ্জিন থেকে অনেক বেশি ব্যবহারবান্ধব।ফলে গ্রাহক নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছে।
তবে এই পরিবর্তনের ফলে এক বড় প্রশ্নও আমাদের সামনে আসছে—ভবিষ্যতের তথ্য অনুসন্ধান কি পুরোপুরি এআই-নির্ভর হয়ে যাবে? অনেক প্রযুক্তিবিদ বলছেন, সার্চ ইঞ্জিন যেমন গুগল, তাদের স্থান পুরোপুরি হারাবে না। বরং তারা নিজেদের বদলাবে, এবং এআইয়ের সঙ্গে মিলিয়েই নতুন ধারা তৈরি করবে। অন্যদিকে, এআই চ্যাটবটগুলোরও চ্যালেঞ্জ থাকবে নির্ভুলতা, পক্ষপাতহীনতা এবং তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার ক্ষেত্রে।কারণ তথ্যের নির্ভুলতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা গ্রাহকের কাছে খুবই মুল্যবান।
সব মিলিয়ে, আমরা এখন একটি টেকনোলজিক্যাল ট্রান্সফর্মেশনের চূড়ান্ত ধাপে দাঁড়িয়ে আছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের যেভাবে তথ্য জানতে, বুঝতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করছে, তা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। সামনে হয়তো এমন দিন আসছে, যখন আমাদের প্রতিদিনকার ডিজিটাল জীবন এআই ছাড়া কল্পনাও করা যাবে না।পাশাপাশি দিন দিন এআই প্রযুক্তি আরো সুক্ষ্ম ও উন্নত হচ্ছে।তাছাড়া এআই ব্যবহার অনেক সহজ এবং খুব সহজেই দরকারী ফলাফল পাওয়া যায় ।