২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুন-এই তিন মাসে (তৃতীয় প্রান্তিকে) বড় রকমের আয় করেছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই সময়ে তারা আয় করেছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এই আয় বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, নতুন আইফোন ১৬ সিরিজের রেকর্ড বিক্রি বেড়ে যাওয়া।
আইফোন ১৬ এর চাহিদা অনেক বেশি
এক সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বলেন, বর্তমানে অ্যাপলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফোন হলো আইফোন ১৬ সিরিজ। এই সিরিজের ফোনগুলো আগের আইফোন ১৫ সিরিজ থেকে অনেক ভালো বিক্রি হয়েছে।
এই তিন মাসে শুধু আইফোন বিক্রি করেই অ্যাপলের আয় হয়েছে ৪ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার। যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।
তিনি বলেন, অনেকেই পুরনো ফোন বদলে নতুন আইফোন ১৬ মডেলে আপগ্রেড করেছেন। নতুন এই সিরিজে আরও ভালো ডিজাইন, ক্যামেরা, এবং নতুন ফিচার থাকায় মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছে।
আইফোন ১৬ সিরিজে রয়েছে চারটি মডেল-
🔹 আইফোন ১৬
🔹 আইফোন ১৬ প্লাস
🔹 আইফোন ১৬ প্রো
🔹 আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স
এই চারটি মডেলই গ্রাহকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
আইফোন বিক্রির বড় রেকর্ড
এই প্রান্তিকে অ্যাপল শুধু আয়ই বাড়ায়নি, বরং একটি বড় রেকর্ডও গড়েছে। ২০০৭ সালে প্রথম আইফোন বাজারে আনার পর থেকে এখন পর্যন্ত অ্যাপল মোট ৩০০ কোটি ইউনিট আইফোন সরবরাহ করেছে। এটি অ্যাপলের জন্য একটি বড় অর্জন।
এই প্রান্তিকে অ্যাপলের যে আয় হয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি এসেছে শুধু আইফোন বিক্রি থেকে। এটি প্রমাণ করে, এখনো আইফোনই অ্যাপলের মূল আয় করার মাধ্যম।
আগেই ফোন কিনে নিচ্ছেন অনেকেই
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আমদানি শুল্ক বা ট্যারিফ আসতে পারে এই আশঙ্কায় অনেকেই আগেভাগেই আইফোন কিনে নিচ্ছেন। অনেকে ভাবছেন, পরে দাম বাড়তে পারে, তাই আগেই নতুন ফোন কিনে নিচ্ছেন।
এই কারণেও আইফোন বিক্রি আরও বেড়ে গেছে।
শুল্কের কারণে অ্যাপলের ব্যয় বাড়ছে
ব্লুমবার্গ নামের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন আমদানি শুল্কের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তার ফলে অ্যাপলের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
গত তিন মাসে শুধু এই শুল্কজনিত কারণে অ্যাপলের অতিরিক্ত ৮০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, আগামী প্রান্তিকে এই ব্যয় বেড়ে ১১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। কারণ অ্যাপলের অনেক যন্ত্রাংশ এবং প্রযুক্তি চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। শুল্ক বাড়লে খরচও বাড়বে।
অ্যাপলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
টিম কুক বলেন, অ্যাপল শুধু আইফোনে নয়, বরং নতুন প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, ও পরিবেশবান্ধব যন্ত্র তৈরিতে জোর দিচ্ছে।
তাছাড়া অ্যাপল এখন চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভারত, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশে উৎপাদন বাড়াতে চাইছে। এতে ভবিষ্যতে শুল্ক বা রাজনৈতিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ভারতে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা
বর্তমানে অ্যাপল ভারতে বছরে প্রায় ৪ কোটি ইউনিট আইফোন তৈরি করছে। কোম্পানিটি পরিকল্পনা করছে এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর। এতে করে চীন থেকে সরাসরি যন্ত্রপাতি না এনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশি বিনিয়োগে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যা অ্যাপলের মতো বড় কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করছে।সবমিলিয়ে, ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিক অ্যাপলের জন্য খুবই সফল একটি সময় ছিল। আইফোন ১৬ সিরিজ তাদের জন্য রেকর্ড আয় এনে দিয়েছে। যদিও ভবিষ্যতে ট্যারিফ বা অন্যান্য সমস্যার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তবু অ্যাপল সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে তারা আরও সাফল্য অর্জন করতে পারবে।