২০০৮ সালের পর এটি প্রথমবার অ্যাপল আগামী আগস্টে চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দালিয়ান শহরের পার্কল্যান্ড মলে অবস্থিত তাদের একটি স্টোর বন্ধ করবে। এটি অ্যাপলের জন্য বিশেষ কারণ, কারণ ২০০৮ সালে চীনে তাদের প্রথম স্টোর খোলার পর থেকে এটি প্রথমবারের মতো কোনো রিটেইল স্টোর স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ঘটনা।
কেন বন্ধ হচ্ছে স্টোরটি?
পার্কল্যান্ড মলটি সম্প্রতি বেশ সমস্যায় পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই মলের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। মাইকেল কর্স, আর্মানি, কোচ, হুগো বোসের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডও এখানে তাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে অ্যাপলও বুঝেছে, ওই মলে স্টোর চালানো আর লাভজনক নয়।
অ্যাপলের মুখপাত্র ব্রায়ান বাম্বারি বলেছেন, “আমরা দালিয়ান কমিউনিটির সেবা দিতে পছন্দ করি, কিন্তু পার্কল্যান্ড মল থেকে বেশ কিছু বড় ব্র্যান্ড চলে যাওয়ার পর আমরা আমাদের স্টোর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে অন্য কোনো অ্যাপল স্টোরে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে।”
চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
চীনের অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা চাপের মধ্যে আছে। সাধারণ মানুষ বেশি খরচ করছে না। সরকারের পক্ষ থেকে স্মার্টফোন, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালানো হচ্ছে, যাতে মানুষ বেশি কেনাকাটা করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রোগ্রামগুলো খুব বেশি দিন চলবে না এবং মানুষের খরচ আবার কমে যেতে পারে।
অ্যাপলের জন্য চীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার হলেও, এখানে তাদের ব্যবসা কিছুটা কমে এসেছে। গত ছয় ত্রৈমাসিকে অ্যাপলের বিক্রয় কমেছে। গত বছর চীনে তাদের আয় ছিল প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ১০% কম। অর্থাৎ আগের চেয়ে বিক্রয় কমেছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে
চীনে হুয়াওয়ে, শাওমি, বিবো, এবং ভিভোর মতো চীনা কোম্পানিগুলো খুব দ্রুত ভালো ফোন বানাচ্ছে এবং কম দামে বিক্রি করছে। তারা অ্যাপলের বাজারের শেয়ার কমিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণা বলেছে, চীনে স্মার্টফোন বিক্রিতে অ্যাপলের শেয়ার ১৭.৯% থেকে কমে ১৫.৫% হয়েছে।
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে অ্যাপল তাদের অবস্থান রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে।
অন্য কোথায় কি হচ্ছে?
দালিয়ানে অ্যাপলের আরেকটি স্টোর আছে, যেটি পার্কল্যান্ড মল থেকে আলাদা একটি বড় শপিং মলে — ওলিম্পিয়া ৬৬। ওই স্টোরটি বন্ধ হচ্ছে না, চলমান থাকবে।
আরও একটা খবর হলো, এই মাসে দক্ষিণ চীনের শেনজেন শহরে অ্যাপল নতুন একটি স্টোর খুলছে। এছাড়া আগামী বছর বেইজিং ও সাংহাই-তে আরও নতুন স্টোর খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
এভাবে অ্যাপল নতুন জায়গায় বিনিয়োগ করছে এবং পুরনো অপ্রস্তুত বা সমস্যা যেখানে আছে, সেখান থেকে সরছে।
স্টোর বন্ধ হওয়া কি বড় সমস্যা?
স্টোর একটাই বন্ধ হলেও অ্যাপল এখনও চীনে প্রায় ৫৬-৫৮টি স্টোর পরিচালনা করছে, যা বিশ্বব্যাপী তাদের স্টোরের প্রায় ১০%। অর্থাৎ তারা চীনের বাজার থেকে পুরোপুরি সরে যাচ্ছে না, বরং যেখানে লাভজনক নয় সেখান থেকে তাদের উপস্থিতি কমাচ্ছে।
স্টোর বন্ধ হওয়া মানে ব্যবসা থেকে সরে যাওয়া নয়, বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যাতে তারা তাদের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ভালোভাবে করতে পারে।
চীনে অ্যাপলের ভবিষ্যৎ কেমন?
অ্যাপল চীনে এখনও বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি। তাদের অনেক ভক্ত ও ব্যবহারকারী আছে। তবে চীনা বাজার এখন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। নতুন ও সস্তা ফোনের সঙ্গে তারা প্রতিযোগিতা করছে। ফলে অ্যাপলকে অবশ্যই নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
নতুন স্টোর খোলা, পুরনো স্টোর রিসাইজ বা বন্ধ করা, সফটওয়্যার ও সার্ভিস উন্নত করা — সবই এর অংশ।
সংক্ষেপে:
অ্যাপল ৯ আগস্ট দালিয়ানে পার্কল্যান্ড মল থেকে তাদের স্টোর বন্ধ করবে।
মলটির অর্থনৈতিক সমস্যা ও বড় বড় ব্র্যান্ডের সরে যাওয়া এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ।
দালিয়ানে অ্যাপলের অন্য স্টোর ওলিম্পিয়া ৬৬ চালু থাকবে।
চীনে অ্যাপল এখনও ৫৬-৫৮টি স্টোর পরিচালনা করছে এবং নতুন স্টোর খুলছে।
চীনের অর্থনীতি ও কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে অ্যাপলের বিক্রয় কিছুটা কমেছে।
অ্যাপল ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছে না, বরং কৌশলগতভাবে তাদের উপস্থিতি পুনর্বিন্যাস করছে।
চীনে অ্যাপলের এই স্টোর বন্ধ হওয়া তাদের ব্যবসার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানের সমস্যা। পুরো দেশের বাজার থেকে তারা সরে যাচ্ছে না, বরং নতুন সুযোগ ও চাহিদার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায় যে অ্যাপল চীনের বাজারকে গুরুত্ব দেয়, কিন্তু যেখানে সমস্যা রয়েছে সেখান থেকে সরিয়ে কৌশল বদলাচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা চীনে আবারো ভালো অবস্থানে আসার জন্য কাজ করবে।