আমরা অনেকদিন ধরেই জানি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) মানুষের কাজকে সহজ করে দেয়। বিশেষ করে সফটওয়্যার নির্মাতাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ধারণা করা হয়, এআই টুল ব্যবহার করলে একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার বা নির্মাতা আগের তুলনায় দ্রুত কাজ শেষ করতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা আমাদের সেই ধারণার সঙ্গে মেলে না। বরং এটি ঠিক উল্টো কথা বলছে।চলুন তাহলে বিস্তারিত আলোচনা করে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অভিজ্ঞ সফটওয়্যার নির্মাতা, তারা যখন এআই টুল ব্যবহার করে কোড লিখছিলেন, তখন তাদের কাজ আগের চেয়ে ধীরে হয়েছে। তারা যে এআই টুলটি ব্যবহার করেছিলেন, সেটির নাম ছিল ‘কার্সর’। এটি একটি জনপ্রিয় কোডিং সহায়ক এআই টুল, যা ওপেন সোর্স প্রজেক্টে কোড লেখায় সাহায্য করে।
গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থা পরিচালনা করে বছরের শুরুতে। তারা কিছু অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ডেভেলপারকে একটি পরিচিত কোডবেসে কাজ করতে বলেন। ডেভেলপাররা ‘কার্সর’ নামের এআই টুলের সাহায্যে কাজ করছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এআই ব্যবহার করে কাজের সময় কমিয়ে আনা। গবেষণার আগে তারা ধারণা করেছিলেন, অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সময় তারা বাঁচাতে পারবেন।
গবেষণার ফলাফল কী ছিল?
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সম্পূর্ণ উল্টো ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারের ফলে সময় কমেনি বরং গড়ে ১৯ শতাংশ সময় বেশি লেগেছে। মানে, আগে যদি কোনো কাজ শেষ করতে ১০ ঘণ্টা লাগত, এখন সেটিই শেষ করতে ১১ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটের মতো সময় লেগেছে।এটা সত্যি অবাক করার মত ছিল তাদের কাছে,কেননা এটা তারা সত্যিকার অর্থেই ভাবেন নি।
গবেষণার পর যখন ডেভেলপারদের জিজ্ঞেস করা হয়, তখনও অনেকেই বলেছিলেন তাদের মনে হচ্ছে কাজের সময় কমেছে। তাদের মনে হয়েছিল, তারা হয়তো ২০ শতাংশ সময় বাঁচাতে পেরেছেন। কিন্তু পরিমাপ করে দেখা গেল বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।
গবেষণার প্রধান দুই লেখক ছিলেন জোয়েল বেকার ও নেট রাশ। তাঁরা বলেন, এই ফলাফল তাঁদের জন্যও চমকপ্রদ ছিল। কারণ তাঁরা নিজেরাও মনে করতেন যে, এআই অভিজ্ঞদের কাজে গতি এনে দেবে। নেট রাশ বলেন, গবেষণার আগে তিনি আশা করেছিলেন, AI ব্যবহারে কাজের গতি প্রায় দ্বিগুণ হবে।
কেন কাজের সময় বেড়ে গেল?
এই প্রশ্নটিই সবার মনে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর প্রধান কারণ হলো—AI টুল অনেক সময় ভুল পরামর্শ দেয়। যেমন, কোড লেখার সময় যদি এআই ভুল সাজেশন দেয়, তাহলে সেটি ঠিক করতে সময় লাগে। এমনকি অনেক সময় সেই ভুল খুঁজে বের করতেও বেশি সময় লাগে। এই কারণে মূল কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়।
এছাড়াও, যখন একজন অভিজ্ঞ সফটওয়্যার নির্মাতা কোনো টুল ব্যবহার করেন, তখন তাঁরা অনেক সময় সেই টুলের পরামর্শ যাচাই করে দেখেন। এআই যদি কোনো ভুল তথ্য দেয়, তবে সেটি বুঝতে তাঁদের অভিজ্ঞতাই সাহায্য করে, কিন্তু সেটি যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।
নতুনদের ক্ষেত্রে কি এআই উপকারি?
এই গবেষণাটি মূলত অভিজ্ঞদের উপর চালানো হয়েছে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, যারা নতুন প্রোগ্রামার বা ডেভেলপার, তাদের জন্য এআই অনেক বেশি সহায়ক। কারণ তারা এখনো অনেক জিনিস শিখছেন, এবং তাদের জন্য প্রাথমিক সাহায্য দরকার হয়। এআই সেখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অভিজ্ঞদের জন্য এটি সবসময় উপকারি হয় না।
গবেষকরা বলেন, এআই একটি শক্তিশালী টুল, কিন্তু এটি এখনও পুরোপুরি নিখুঁত নয়। এখনো এতে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তাই একে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায় না। কাজ করতে গেলে একজন মানুষের বিচার-বিবেচনা খুব দরকার। শুধু এআইয়ের ওপর নির্ভর করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে এই গবেষণার মানে এই নয় যে এআই খারাপ। বরং এটিকে বুঝে-শুনে ব্যবহার করা দরকার। কিছু কিছু কাজ আছে যেখানে এআই অনেক ভালো ফল দেয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে মানুষ নিজে কাজ করলে আরও ভালো হয়।
এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এআই আমাদের সহায়ক হতে পারে, তবে সবসময় নয়। অভিজ্ঞ ডেভেলপারদের কাজ দ্রুত করতে গেলে তাদের নিজের দক্ষতা ও বিচারবোধই বেশি জরুরি। AI ভুল করলে সেটি ধরতে ও ঠিক করতে সময় লাগে। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আরও উন্নত এআই তৈরি হবে, যেগুলো কম ভুল করবে। কিন্তু এখনকার জন্য আমাদের সতর্কভাবে এআই ব্যবহার করতে হবে এবং সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।ইউটিউব, ব্লগ বা এবিষয়ে কোর্স করে আমরা এআই সমন্ধে বিস্তারিত জানতে পারব, পাশাপাশি এর সঠিক ব্যবহার করে বাস্তবমুখী কাজ সম্পন্ন করতে পারব।